পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

384 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বাংলাদেশ ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাম্প্রদায়িকতা জাতীয় ১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা সম্পাদকীয় সাম্প্রদায়িকতা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী বর্তমান বাংলাদেশের যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে তা কোন শোষক শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের জন্য নয়। এ যুদ্ধ সাড়ে সাত কোটি নির্যাতিত, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের মুক্তিযুদ্ধ। পাঞ্জাবী শোষকগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত একচেটিয়া পুঁজিতান্ত্রিক ও আমলাতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক নিষ্পেষণে থেকে এ যুদ্ধের জন্ম। এ যুদ্ধ বাংলার জনগণের যুদ্ধ অর্থাৎ জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ। তাই এই যুদ্ধ কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব বিস্তার করবে না বা করতে পারে না। কিন্তু দখলদার বাহিনীর সরদার ইয়াহিয়া যুদ্ধের শুরু থেকে ঘৃণ্য এক রাজনৈতিক চক্রান্তের মাধ্যমে এ যুদ্ধকে একটা সম্প্রদায়ের উপর চাপিয়ে বাংলার নিরিহ জনগণকে হত্যা করে চলেছে এবং সেই জন্য সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী এবং সাম্প্রদায়িক শিক্ষা ও প্রচারণা দ্বারা প্রতারিত কিছুসংখ্যক মানুষ ইয়াহিয়ার চক্রান্তের শিকার হয়ে এখনো সম্প্রদায়ের বিষাক্ত বিষ ছড়াচ্ছে। আমরা জানি সাম্প্রদায়িকতায় এ জাতীয় মানুষের কোন লাভ হয় না। তবুও তারা গোপনে গোপনে এরূপ জঘন্য কাজ করে চলছে। যেমন আফিম-এর নেশায় মানুষের চিন্তাশক্তি থেকে শুরু করে সকল প্রকার শক্তিই স্তিমিত হয়ে আসে। তেমনি সাম্প্রদায়িতকাবাদীরা কুশিক্ষা আর অসৎ প্রচারণার বশবর্তী হয়ে তাদের সত্যদর্শনের ক্ষমতা লুপ্ত হয়। যাক যা বলতে যাচ্ছিলাম, এ যুদ্ধে যখন সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই তখন কোন একক সম্প্রদায় এরূপ মহান যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে পারে না। এ যুদ্ধের ঝুঁকি আমাদের সকলের অর্থাৎ সমগ্র বাংলার জনগণের। তাই যারা হানাদারদের এই চক্রান্ত বুঝতে পারেননি, বাস্তব অবস্থা দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করবেন এবং জনবিরোধী সাম্প্রদায়িকতাবাদ পরিহার করবেন। কারণ গত ২৪ বৎসর ধরে সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা বাংলার জনগণের কোন উপকার হয়নি। সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা কারা উপকৃত হয়েছে সে প্রশ্ন এখন থাক। আসল কথা হলো এই মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত ব্যক্তি বা পরিবারকে হানাদার বাহিনী পথে বসিয়েছে সেই সমস্ত ব্যক্তি বা পরিবারের দুঃখ কষ্ট আমাদের সমানভাবে ভাগ করে নিতে হবে। একটা সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার চলবে আর অন্য সম্প্রদায় পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে কৃত্রিম সমবেদনা জানাবে সেটা এই জাতীয় যুদ্ধের পরিপন্থী এবং বাংলার জনগণের তা কাম্য নয়।