পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

392 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় দেশ বাংলা* ৪ নভেম্বর, ১৯৭১ অনিবার্য সমাধি ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা সম্পাদকীয় অনিবার্য সমাধি ইয়াহিয়া খাঁ গভীর গাড্ডায় পড়েছেন। বলা বাহুল্য এই গাড়া তিনি নিজেই খুঁড়েছিলেন অবশ্য নিজের পাপ ঢাকার জন্য। বাংলাদেশের জনগণের রায়কে নস্যাৎ করতে হলে যে পাশবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাইতেই হয়, তার দায়দায়িত্ব প্রতিপক্ষের ঘাড়ে চাপাবার জন্য ফাঁদ বানিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন তাঁর সে ফাঁদে আটকা পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বাংলার স্বাধিকারকামী নেতৃত্ব। আর তিনি তাঁর লাঠিয়ালদের নিয়ে মনের সুখে রাজত্ব চালাবেন। কিন্তু কথায় আছে অতি চালাকের গলায় দড়ি। ইয়াহিয়াও সম্ভবতঃ একটু বেশী চালাকী করতে গিয়েছিলেন। আর তাতেই পতন-স্বখাত সলিলে। গত তেইশ বৎসর ধরে বাংলার মানুষকে সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত করে পাঞ্জাবের উদরপূর্তির যে প্রচেষ্টা হয়েছে তাতে বাধ সাধতে গেলেই এই ফাঁদ অতি সন্তপণে গুটিয়ে আনা হয়েছে। বাংলার মানুষ সরল বিশ্বাসে হাত মেলাতে গিয়ে সে ফাঁদে আটকা পড়েছে। একবার দু’বার নয়-অসংখ্যবার। তথাকথিত পাকিস্তানের ইতিহাস ঘাঁটলেই তা চোখে পড়বে। ফাঁদ পাতা হয়েছিল ১৯৪৬-এর নির্বাচনে বাংলার মানুষ জেনেছিল এ নির্বাচনে জয়ী হলে তারা স্বাধীন বাংলার মালিক হবে। মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবের মর্মকথাও ছিল তা-ই। বাংলার মুসলমানরা অবিভক্ত ভারত চায়নি। কিন্তু স্বাধীন বাংলা চেয়েছিল। এর পেছনেও হয়তো বা বাংলাদেশে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা জাহির করার আকাঙক্ষাই প্রবল ছিল। কিন্তু তা ছিল একান্তই স্বাভাবিক এবং প্রকৃতিগত অধিকার প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা মাত্র। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের ইসু ছিল দুটি। সমগ্র উপমহাদেশ একটি মাত্র রাষ্ট্র হবে, না-কি একাধিক রাষ্ট্রে বিভক্ত হবে। কংগ্রেস ছিল একক জাতীয়তার ধারক, মুসলিম লীগ দ্বিজাতিতত্বের। কিন্তু মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতত্বের ব্যাখ্যা বাংলার মুসলমানদের কাছে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। হিন্দু এবং মুসলমানদের জন্য দুটি পৃথক রাষ্ট্রে উপমহাদেশকে ভাগ করার কথা চিন্তা করেনি বাংলার মুসলমান। বাঙালী ফজলুল হকের মুসাবিদা করা লাহোর প্রস্তাব’ই তার প্রামাণ্য দলিল। সোহরাওয়াদীর যুক্তবাংলা গড়ার শেষ চেষ্টাও তারই বহিঃপ্রকাশ। বাংলার মুসলমান উপমহাদেশে একাধিক রাষ্ট্রের সমম্বয় চেয়েছিল। আর বঙ্গভঙ্গ বাঙালী হিন্দুর কাছে ছিল মাতৃহত্যার তুল্য। এ জন্যই কেবিনেট মিশনের প্রস্তাব আজো বাংলার মানুষের কাছে পালিয়ে যাওয়া সোনার হরিণ। কিন্তু ৪৬ সালের নির্বাচনের পর মুসলিম লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনী কর্মসূচী ভুলে গিয়ে নির্বাচনের ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের দিকে মন দিয়েছিল। সে নেতৃত্বে ছিল স্পষ্টতই অবাঙালী নেতৃত্ব। বাংলাকে ভাগ করে অথর্ব করে দিতে না পারলে অবাঙালী কর্তৃত্ব চিরস্থায়ী করা যেতো না, করাচীতে বসে

  • দেশবাংলাঃ সাপ্তাহিক। বাংলাদেশের জনযুদ্ধের মুখপত্র। সম্পাদকঃ ফেরদৌস আহমদ কোরেশী। দীপক সেন কর্তৃক বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল থেকে মুদ্রিত ও অগ্নিশিখা’ প্রকাশনীর পক্ষে বিজয় নগর, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।