পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

395 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড ক্ষীণ। কারণ তাহলে তাঁদের স্বদেশে তাঁরা এতদিনের গোয়াতুমীর পরিণতির জন্য ধিকৃত হবেন এবং প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক সমাধি রচিত হবে। ঘ) সম্মিলিত পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে এক ইউনিট বাতিল হয়ে চারটি প্রদেশ হয়েছে। এখন বাংলাদেশ যে অধিকার ভোগ করবে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রদেশগুলিও তাই ভাগ করবে। কিন্তু, বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে তা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বিপরীতে ‘পশ্চিম পাকিস্তান · ধরনের একটি সম্মিলিত কাঠামো খাড়া না রাখলে কোন সমাধানই কার্যকর হবে না। কিন্তু তা হবে এক ইউনিট ব্যবস্থারই পুনঃপ্রবর্তন, যেটা পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষুদ্রতর প্রদেশগুলি মানবে না। আর এক ইউনিট পুনর্বহাল করার অর্থ হবে প্যারিটিতে ফিরে যাবার পাঁয়তারা, বাংলাদেশের মানুষ বহু পূর্বেই যা ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় যে কোনভাবেই হোক পাকিস্তানের প্রতি বাংলার মুসলমানদের পূর্ণ আনুগত্য আদায় করা সম্ভব হয়েছিল। সে আনুগত্য এমনই ছিল যে সেদিনের বাঙালী মুসলমান ফজলুল হক সেই আনুগত্যকে বশ্যতা হিসাবে ধরে নিয়ে পাঞ্জাবী রাজনীতি যেভাবে ২৪টি বছর দেশটাকে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তির মত ব্যবহার করেছে তাতে করে পরিস্থিতির এখন আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ইতিমধ্যে পদ্মা-মেঘনা ও সিন্ধু নদীতে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। আর সম্ভবতঃ পাকিস্তান নামক দেশটির রাষ্ট্রীয় ভিত্তিও তাতেই ভেসে গেছে। কিন্তু সে কথা বাদ দিলেও যেটা এখন মৌল প্রশ্ন তা হচ্ছে এই-পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাঙালীদের অবস্থান সম্ভব করে তোলার জন্য যে নির্ভেজাল গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন এবং বহাল রাখার নিশ্চয়তা প্রয়োজন, পাঞ্জাবী শাসকচক্র তাতে কোন অবস্থাতেই রাজী হতে পারে না। পাঞ্জাবীরা আপাততঃ যদি অবস্থার চাপে পড়ে, কোন প্রকার নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করেও তবে তা বাঙালীদের নিকট বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কারণ, পাঞ্জাবীচক্রের অতীত কার্যকলাপ এবং বর্তমানের মানসিকতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, তারা কেবল পরবর্তী সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকবে। এবং নিজেদের সুবিধাজনক ষ্ট্রাটেজী কাজে লাগিয়ে বাঙলাদেশের অভ্যন্তরে পা রাখার জায়গাটুকু করে নিতে পারলেই পুনরায় নগ্নরুপে ফিরে যেতে দ্বিধা করবে না। কাজেই আন্তর্জাতিক চাপ যতই আসুক, পাকিস্তানের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তনে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান মিলবে না। দুটি পরস্পরবিরোধী স্বার্থের এবং পরস্পর বিদ্বিষ্ট মনোভাবের ধারক অঞ্চলকে এক জোয়ালে বেঁধে রাখার চেষ্টা করে লাভ নেই। এটা অবাস্তব এবং প্রকৃতির ধর্মের বিরোধী। বর্তমান যুগে রাষ্ট্রযন্ত্র হচ্ছে নির্দিষ্ট জনসমষ্টির সর্বাধিক কল্যাণের জন্য নির্মিত স্বেচ্ছামূলক সংগঠন। যে ক্ষেত্রে এক অঞ্চলের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা, সামাজিক চেতনা ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার অপর অঞ্চলের চাইতে সম্পূর্ণ পৃথক, যে ক্ষেত্রে এক অঞ্চলের অর্থনৈতিক শক্তির উন্মেষ অপর অঞ্চলের উপর বেনিয়া শোষণের পথ প্রশস্ত করে, যে ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের সহজ ও স্বাভাবিক বিকাশ অঞ্চল বিশেষের প্রাধান্য অনিবার্য করে তোলে, সে ক্ষেত্রে একই রাষ্ট্রীয়তা অবৈজ্ঞানিক। শ্যামদেশের সেই যমজ ভ্রাতৃদ্বয়ের মত একের পিঠের সাথে অপরের ংযুক্ত অবস্থান উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। কাজেই অপারেশনের কাজ যত তাড়াতাড়ি শেষ হয় ততই মঙ্গল।