পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

403 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড দিতে দেরী করেন নি। কিন্তু ২৫শে মার্চের পর পুনরায় ভোল পাল্টে ফজলুল কাদেরের বৈঠকখানায় হাজিরা দিয়েছেন। সংগতভাবেই বলা যায়, পাক-বাহিনীর হাত গুটাবার লক্ষণ দেখা দিলে তিনি আবারও ডিগবাজী খেতে দেরী করবেন না। স্বাতন্ত্র্যবোধ জেগে উঠেছিল বেশ কিছুকাল পূর্ব থেকে এবং তার পেছনে পাক-উস্কানীও ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী মিজো এলাকা থেকে বিদ্রোহীদের বাংলাদেশের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সেখানে তাদের সামরিক শিক্ষা দেওয়া হয়। পরে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মিজোরা দেশে ফিরে নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত হলে ভারত সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। বিদ্রোহী মিজোদের নেতা লালডেঙ্গা এখন বাংলাদেশের ভেতরে পাক-সামরিক ছাউনীতে বেশ কিছুসংখ্যক অনুগামীসহ অবস্থান করছেন। মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে হামলা পরিচালনার সময় পাক বাহিনী কয়েকশত মিজো পরিবারকে কয়েকটি মাত্র বন্দুক হাতে নিয়ে অগ্রবর্তী বাহিনী হয়ে এগিয়ে যেতে বাধ্য করে। তাদের গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগুতে বলা হয়, যাতে করে পাল্টা জবাব থেকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান নির্ণয় করা যায়। তাদের পিছু পিছু পাক-বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে এগুতে থাকে। ফলে এই হতভাগ্যরা অধিকাংশই সপরিবারে ক্রস ফায়ারিং-এর শিকার হয়। ভারত সরকার কর্তৃক কেন্দ্র শাসিত মিজোরাম ষ্টেট গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হবার পর মিজোদের মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাব দূর হতে চলেছে। বিদ্রোহীদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিয়েছে অনেক দিন থেকে। স্বায়ত্তশাসিত মিজো ষ্টেট পেলেই তাঁদের অনেকেই খুশী। লালডেংগার সমর্থন তাই দিন দিনই কমে আসছে এবং তাকে নাগা নেতা ডঃ ফিজোর ভাগ্যই যে বরণ করে নিতে হচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। পাকিস্তানী ছাউনীতে পাক তাঁদের মধ্যে তথাকথিত স্বাধীন মিজোরাম সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লালমিনখাংগা ও অর্থমন্ত্রী লালথাওলিয়া রয়েছেন। মিজো জেলাকে ইউনিয়ন টেরিটরিতে রুপান্তরিত করা এবং আসাম সরকার কর্তৃক গণ-ক্ষমা প্রদর্শনের ঘোষণায় তাঁরা সন্তুষ্ট হয়েছেন। প্রসংগত উল্লেখযোগ্য যে, মিজো জাতীয় ফ্রন্টের সহ-সভাপতি লালনুনমাউইয়ার নেতৃত্বে চরমপন্থীদের একাংশ পূর্বেই বিচ্ছিন্ন হয়ে এসেছেন। পাক-ছাউনীতে লালডেঙ্গার অনুগামীদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। পাকবাহিনী তাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করছে। মিজোদের স্বাধীনতা’র প্রশ্নটি চাপা দিয়ে, পাক-বাহিনী তাদের ভারত ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও নাশকতামূলক কার্যকলাপে লিপ্ত রেখে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। এ সব ব্যাপারে মতভেদ হওয়ায় লালডেঙ্গা তাঁর আটজন কমাণ্ডারের ছয়জনকে সম্প্রতি বরখাস্ত করেছেন। কেন্দ্রশাসিত মিজো ষ্টেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাথে সাথে লালডেঙ্গার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটবে তা এখন নিশ্চিতভাবে বলা যায়; সেই সাথে ঘটবে পূর্বাঞ্চলের উপজাতীয়দের নিয়ে পাক-বাহিনীর দীর্ঘ দিনের ষড়যন্ত্রেরও অবসান।