পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

417 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড থেকে বর্তমানে এই দলটির স্থান দ্বিতীয়। ন্যাপ ও কমু্যনিষ্ট পার্টি দু’নামে সংগঠন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হবে বলে মনে হয়, তবে তেমন অবস্থায় কোনটি রেখে কোনটি ভেঙ্গে দেওয়া হবে, তা সম্ভবতঃ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। (৩) বাংলা জাতীয় লীগ (সভাপতি, আতাউর রহমান খান) সহযোগী ছাত্র সংগঠন, বাংলা ছাত্রলীগ। সংগঠনগত ও জনসমর্থনের দিক থেকে এই দলের স্থান হবে তৃতীয়; আতাউর রহমান খান সামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, পরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয় কিন্তু তিনি ঢাকাতেই থেকে যান। তাঁর দলের কর্মী মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। (৪) ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী পন্থী)। বেহুধা বিভক্তির পর এবং চরম বামপন্থী উপদলগুলির পৃথক পৃথক সংগঠন গড়ে তোলার ফলে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন এক কালের বিরাট সংগঠনটি এখন পূর্ব জৌলুষ হারিয়ে ফেললেও, মওলানার ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয়তা এখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। মওলানার পরবর্তী কার্যক্রমের উপর এর ভবিষ্যত নির্ভর করবে। (৫) বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস। পূর্ব পাকিস্তানের এককালীন অর্থমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর এবং প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ভবেশ নদীর নেতৃত্বাধীন এই দলটি এযাবৎকাল সংখ্যালঘুদের দল হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসলেও, বর্তমান সংগ্রাম এবং মনোরঞ্জন বাবুর বাংলাদেশ সরকারের কন্সালটেটিভ কমিটির সদস্য হওয়ার প্রেক্ষিতে এই দলটি এখন গুরুত্ব অর্জন করেছে। দলের ভবিষ্যত কার্যক্রম বিশেষভাবে লক্ষণীয়। (৬) বামপন্থী কমু্যনিষ্ট উপদলসমূহ বামপন্থী কমু্যনিষ্ট উপদলগুলির একাংশ মুক্তি সংগ্রামের অনুকূলে বক্তব্য পেশ করেছে, অপর অংশ বিরোধিতা করেছে। এ সব সংগঠনের অনেকগুলি হয়তো ভবিষ্যতেও “আণ্ডার গ্রাউণ্ড সংগঠন হিসাবেই কাজ চালাবে। আইনসিদ্ধ প্রকাশ্য কমু্যনিষ্ট পার্টি করারও চেষ্টা হতে পারে। এ সম্বন্ধে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। পিকিং-এর সাম্প্রতিক ভূমিকা এদের পক্ষে খুবই অসুবিধাজনক হয়েছে। (৭) এ ছাড়াও শ্রমিক কৃষক-সমাজবাদী দল এবং অলি আহাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় লীগের উপদলটিও পৃথক দলীয় অস্তিত্ব বজায় রাখবে বলে মনে হয়। উভয় দলেরই কয়েকটি শ্রমিক এলাকায় প্রভাব রয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আগামী দিনের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়াও আরো কয়েকটি দল মাঠে থাকছে। তন্মধ্যে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর পন্থী) ছাড়া অন্য দলগুলির সাংগঠনিক অবস্থা ভালো নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে নাম-সর্বস্ব। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবেই পার্লামেন্টারী রাজনীতি চালু হতে যাচ্ছে এবং যেহেতু স্বাধীনতার প্রশ্নে এসব দলেরও কমবেশী অবদান রয়েছে, সেহেতু আগামীতে এরাই হবে বিরোধী দল। পার্লামেন্টারী রাজনীতিতে বিরোধীদলের ভূমিকা থাকে মুখ্য। কাজেই কালক্রমে এসব দলও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তবে, আওয়ামী লীগের বিরাট শক্তির মোকাবিলায় ক্ষুদ্র দলের কাজের সুযোগ যে খুবই সীমিত তা এ সব দলের কর্মকর্তাদের না বোঝার কথা নয়। এমতাবস্থায় ক্ষুদ্রতর দলগুলির কয়েকটি একত্রিত হয়ে শক্তিশালী দলে রুপান্তরিত হবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।