পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

4.18 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড এবার দেশ গড়ার পালা দেশ বাংলা ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা এবার দেশ গড়ার পালা দেশবাংলা বিশেষ নিবন্ধ আর কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের রাজধানী স্থানান্তরিত হবে। সম্প্রতি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ কথা ঘোষণা করেছেন। মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর সম্মিলিত অগ্রাভিযানের মুখে পাকিস্তানী জঙ্গী চক্রের পশ্চাদপসরণ এবং একের পর এক শত্রু ঘাঁটিগুলির পতন দেখে তাঁর এ আশাবাদে বিশ্বাস স্থাপন না করার কোন কারণ আমরা দেখি না। ইতিমধ্যেই মুক্ত জেলাগুলিতে পুরাদমে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থার পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ এলাকা এখন বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর প্রভৃতি কয়েকটি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনী এখন কার্যতঃ আত্মসমর্পণের দিন গুনছে। একের পর এক বিভিন্ন এলাকা বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃত্বে আসার সাথে সাথে এখন স্বভাবতই পুনর্গঠনের প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গার পর্ব শেষ হয়েছে। এবার দেশ গড়ার পালা। চার প্রদেশ বাংলাদেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করা প্রশাসন ও উন্নয়ন তৎপরতায় প্রতিটি অঞ্চলের প্রতি যথাযোগ্য গুরুত্ব আরোপের দাবী উঠেছিল ২৫শে মার্চের আগেই। এখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলেছেন জাতীয় ও প্রদেশিক পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কনষ্টিটিউয়েন্ট এসেমব্রি গঠন করা হবে। এই এসেমব্লিকে চার প্রদেশের কাঠামো এবং কেন্দ্র ও প্রদেশের সম্পর্ক নির্ধারণের ভার দেওয়া যেতে পারে। এ সব প্রদেশ কেবলমাত্র প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনে গড়তে হবে। এক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্ন ওঠার কোন কারণ নেই। আপাততঃ চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশের মর্যাদা দিলেই চলবে। এতে করে ঢাকা শহরের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ কমবে এবং দেশে আরো কয়েকটি প্রথম শ্রেণীর শহর চলবেনা। কারণ সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক রেষারেষিতে জাতীয় ঐক্য দুর্বল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। গণতহ্যা ঠেকাতে হবে শত্রর চর এবং সহযোগীদের শাস্তি দেবার ভার জনতার উপর বা স্থানীয় নেতৃত্বের উপর ছেড়ে দেওয়া চলবে না। কারণ, তেমন অবস্থায় ব্যক্তিগত শত্রতার জন্য অনেক নিরীহ ব্যক্তিরও লাঞ্ছিত হবার সম্ভাবনা থাকবে। তাছাড়া শক্ৰ সহযোগী অবাঙ্গালীদেরকেও হত্যা করার লাইসেন্স” কাউকে দেওয়া চলবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সময়োচিত ঘোষণা সুবিবেচনার কাজ হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে যথাবিহিত বিচার করে তবেই অপরাধীকে যোগ্য শাস্তি দিতে হবে। বাংলার মাটিতে অনেক রক্ত ঝরেছে, আর এক ফোঁটা রক্তও অনাবশ্যকভাবে ঝরানো উচিত হবে না।