পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

425 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড এত প্রলোভন, প্ররোচনা বা নির্যাতন সত্ত্বেও আজ এ কথা স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে যে, পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নাই, যে শক্তি জাগ্রত বাঙালীর প্রাণে যে স্বাধীনতা সূর্যালোক দ্বীপ্ত হইয়া উঠিয়াছ, তাহা বিনষ্ট করিতে পারে-বিনষ্ট করিতে পারে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দৃঢ় শপথবদ্ধ সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর সংগ্রামী ঐক্যকে। দিকে দিকে মুক্তিবাহিনীর বলদীপ্ত অগ্রগতি, ১৭-১১-৭১ সকাল সাড়ে পাঁচটা হইতে ঢাকার বুকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ, পাক বাহিনীর যত্রতত্র মুক্তিফৌজের ভুতদৰ্শন প্রভৃতি ইহার স্বাক্ষর বহন করিয়া চলিতেছে। তবুও আত্মসস্তুষ্টির সময় নয়। আজ ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী নব্বই লক্ষাধিক শরণার্থী সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর সম্মুখে কঠিন পরীক্ষা উপস্থিত হইয়াছে। যে কোন বাঙালীর সামান্যতম ভুলের জন্যও জাতির জীবনে নিদারুণ সংকট নামিয়া আসিতে পারে। তাই প্রতিটি বাঙালীকেই আজ প্রতিটি পদক্ষেপ করিতে হইবে সুচিন্তিতভাবে। যাহাতে বিভেদ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী বেঈমান দলের আমাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ না ঘটিতে পারে তাহার জন্য প্রখর দৃষ্টি রাখিতে হইবে। তৎসহ সর্বপ্রকারে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করিতে হইবে মুক্তিফৌজে যোগ দিয়া, তাহদের আহার্য ও আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করিয়া বা পাক কুত্তাদের গতিবিধির খবরাখবর দিয়া। যাহার ফলে মুক্তিযুদ্ধ হইবে তুরান্বিত এবং আমরা লাভ করিব আমাদের ইন্সিত ফল শত্ৰমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। -জয় বাংলা 来 মোহররম আর রমজান পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিকট পবিত্রতম দুইটি মাস। রমজান মাসের প্রথম দিন হইতে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলামন সূর্যোদয়ের পূর্বে শয্যাত্যাগ করিয়া পবিত্ৰ শুচিশুদ্ধভাবে আল্লাহ পাক-এর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ে। সমস্ত দিন সর্বপ্রকার আহার্য মাদক দ্রব্য বর্জন করিয়া সাত্ত্বিকভাবে সংসার তথা পৃথিবীর কল্যাণের জন্য খোদা তায়ালার নিকট নির্দিষ্ট ওয়াক্ত অনুযায়ী মোনাজাত করে। রমজানের শেষে সমস্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ঈদগাহ ময়দানে একত্রিত হয় নামাজ পড়ে কোরান শরীফ পাঠ শোনে। রমজান মাসের ঐতিহ্য লইয়া আলোচনা করে গোটা মাস ধরিয়া হিংসাদ্বেষ বর্জন করিয়া সংযম শিক্ষা করিয়া শাস্ত্রের অনুশাসন পালন করে পৃথিবীর প্রতিটি মুসলমান। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের বুকে রমজান মাস পালিত হইতেছে বাঙালী হিন্দু মুসলমানের রক্তের হোলীখেলার দ্বারা। অথচ নরমুণ্ডের দ্বারা গোণ্ডুয়া তথা বাঙালীর খুনে হোলীখেলার সুদক্ষ ক্রীড়াবিদ ইয়াহিয়া ভুট্টো এবং তাদের সামরিক জুন্টা ও দালালরাই প্রচার করিতেছে বাংলার মুসলমানরা নাকি কাফের হইয়া গিয়াছে, তাহারা পবিত্র ইসলামের অবমাননা করিয়াছে। শুধু তাহাই নহে বাঙালী কাফের মুসলমানদের জন্য তাহাদের তাহজীব তমদ্দুন বিপন্ন হইয়াছে। শুধু তাহাই নহে বিপন্ন অবস্থা হইতে ত্ৰাণলাভের জন্য পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রর দরবারে করুণ আকুতি জানাইয়াছে। এবং কতিপয় রাষ্ট্রও পরের মুখে ঝাল খাইয়া, বাংলাদেশের সংগ্রাম পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলিয়া মন্তব্য করিয়া দূর হইতে গোঁফে তা দিতেছে। অনুশাসন পালন করিতেছে। কোন হাদিসে লেখা আছে নররক্তোশান করিলে ধর্মরাজ্য স্থাপিত হইবে, বেহেস্ত নামিয়া আসিবে মর্তের বুকে ? নারী ধর্ষণ, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে হত্যা করিয়াই একমাত্র ইসলাম ধর্ম পালন করা যায় এ কোন নবীর উপদেশ ? কোন আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ ? এ কথা একবারও কি সেই ইসলামের ধ্বজাধারী রাষ্ট্রনায়কগণ চিন্তা করিয়াছে। এবারও কি তাহারা সেই এজিদ সিমারের উত্তরসূরী ইয়াহিয়া ও তার বোমাবর্ষনের দ্বারা গ্রাম, নগর, জনপদ শ্মশানে রূপান্তরিত করার রীতি কোন জঙ্গনামায় লিখিত আছে ? আমরা জানি তা তাহারা করেন নাই। কারণ তাহারাও জানেন আর আমরা বাঙালীও জানি এর পশ্চাতে আছে সাম্রাজ্যবাদী শোষনের হীন