পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

427 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় আমার দেশ* ১১ নভেম্বর, ১৯৭১ শান্তির পারাবাত বাংলাদেশঃ ১১শ সংখ্যা সম্পাদকীয় শান্তির পারাবাত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী উপমহাদেশের বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতির মুখে পাশ্চাত্য দেশগুলো সফর শেষ করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া আসিতেছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী, আজীবন গণতন্ত্রের পূজারী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কি পরিস্থিতিতে শান্তির সন্ধানে বাহির হইয়াছেন। তা প্রণিধানযোগ্য। ২৫শে মার্চ থেকে বাংলাদেশে এশিয়ার খুদে হিটলার ফ্যাসিষ্ট ইয়াহিয়ার নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ লোকালয় জনপদ ধ্বংস ও নারী নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্রের জলস্রোতের মত বাংলাদেশের মানুস সীমান্ত পার হইয়া ভারতে আশ্রয় নিতে শুরু করে। গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী মানবতার খাতিরে সীমান্ত পথ বন্ধ করিয়া দিয়া ছিন্নমূল ভীতসন্ত্রস্ত বাঙালী শরণার্থীদের নরখাদক ইয়াহিয়ার জল্লাদ সৈন্যদের কামানের মুখে ঠেলিয়া দিতে পারেন নাই। বরং পাক বাহিনীর গণহত্যা, গণতন্ত্র হত্যা ও নারী নির্যাতনের মত পৈশাচিক বর্বরতার বিরুদ্ধে মানবতাকে বাঁচাইবার প্রয়োজনে তিনি বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাইয়া গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবিক আদর্শের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছেন। বর্বর ইয়াহিয়া পাকিস্তানের সংহতি ও অখণ্ডতার নামে ইসলাম’ রক্ষার ছদ্মাবরণে বাংলাদেশকে পশ্চিমা কায়েমী স্বার্থবাদীদের স্থায়ী উপনিবেশে পরিণত করিবার জন্য বাংলাদেশে ১০ লক্ষ বাঙালীকে হত্যা করিয়া, তিন কোটি বাঙালীকে গৃহহারা করিয়াছে; এক কোটি বাঙালীকে ভারত ভূখণ্ডে বিতাড়িত করিয়া ভারতীয় অর্থনীতিকে পঙ্গু করিবার অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত হইয়াছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়া অনগ্রসর একটি দেশের পক্ষে এই বিপুল বোঝা বহন করা এককভাবে অসম্ভব ব্যাপার। স্বভাবতঃই আশা করা গিয়াছিল বিশ্বগোষ্ঠী এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ও তজ্জনিত ব্যাপক সংকট রোধে সক্রিয়ভাবে আগাইয়া আসিবেন। কিন্তু বাংলাদেশে গণহত্যা ও গণতন্ত্র হত্যা থেকে ইয়াহিয়াকে বিরত করার জন্য এবং শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়ার মানবিক কাজে বিশ্বগোষ্ঠীর কাছ থেকে আশানুরুপ সাড়া পাওয়া যায় নাই। বরং কোন কোন গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র জল্লাদ ইয়াহিয়াকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়া বাংলাদেশে গণহত্যা ও জনপদ উচ্ছেদে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করিয়াছে। এমন কি কোন কোন রাষ্ট্রের তর্জনী সংকেতে ইয়াহিয়াভুট্টো গংরা ভারতের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানিবার জন্য সীমান্ত সৈন্য মোতায়েন করিয়া যুদ্ধোন্মদনায় মাতিয়া উঠিয়াছে। শুধু তাহাই নয়, ভারত বিরোধী প্রচারণা, উগ্র সাম্প্রদায়িক ভেদভুদ্ধিতে উস্কানী দিয়া ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করিবার চক্রান্ত চালানো হইতেছে। এমনি এক দুৰ্বিসহ সংকট ও চাপের মুখেও ভারত মানবতার খাতিরে প্রশংসনীয়ভাবে এহেন সমস্যার মোকাবিলা করিতেছে। সাথে সাথে ভারত বাংলাদেশে পাক বাহিনীর নৃশংস বর্বরতা বন্ধ করিয়া বাংলাদেশে নির্বাচিত সদস্যদের ইচ্ছানুযায়ী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপূরক একটি ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক সমাধানে ইয়াহিয়ার উপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বগোষ্ঠীর প্রতি আবেদন জানান। কোন কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর বঙ্গবন্ধুকে বিনাশর্তে মুক্তি দিয়া তাঁহার সাথে সংলাপ শুরু করার আহবান জানান। কিন্তু দুৰ্বত্ত ও কপট ইয়াহিয়া বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে পাক-ভারত বিরোধ রূপে চিত্রিত করিবার দুরভিসন্ধি নিয়া দখলীকৃত

  • আমার দেশঃ সাপ্তাহিক। সম্পাদকঃ খাজা আহমদ। মুক্ত বাংলার কোন এক অঞ্চলে ”আমার দেশ” মুদ্রনালয় হতে মুদ্রিত ও ”আমার দেশ”