পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

430 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র I তারিখ সম্পাদকীয় - আমার দেশ - ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১ আঘাতের পর আঘাত হানুন । বাংলাদেশঃ ১৩শ সংখ্যা সম্পাদকীয় আঘাতের পর আঘাত হানুন ক্ষুধিত বাংলায় রক্তের আবিরে রাঙ্গানো স্বাধীনতা সূর্য উদিতপ্রায়। পাক জঙ্গী চক্রের পাশবিক তাণ্ডবের প্রতিশোধ নেয়ার দুর্বার স্পৃহার আঘাত-জর্জর বীর মুক্তিবাহিনী রক্তাক্ত বাংলার সর্বত্র শক্রহননের মহোৎসব শুরু করিয়া দিয়াছেন। শত্রদের হাত হইতে কাড়িয়া নেওয়া অস্ত্ৰ দিয়া পাক জানোয়ারদের বিষদাঁত ভাঙ্গিয়া দিয়া বাংলার পবিত্র মাটিকে শত্রমুক্ত করিতেছেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরে বিক্ষুদ্ধ বাঙ্গালীরা শোকার্ত জীবনের জমাট বাঁধা পাষাণকে ইস্পাতে রুপান্তরিত করিয়া পাষণ্ড ইয়াহিয়ার বর্বর বাহিনীর উপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালাইয়া তাহাদের যুদ্ধোন্মাদনার খায়েশ চিরতরে মিটাইয়া দিতেছে। ক্ষিপ্তগতিতে সুসংগঠিত হইয়া মুক্তিবাহিনী দূর্বার গতিতে শত্রদের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িয়া শত্রদের শক্ত ঘাঁটিগুলি নাস্তানাবুদ করিয়া দিতেছে। ফাঁদে পড়া জন্তুর মতো স্থূলবুদ্ধি ইয়াহিয়া ও তাহার জঙ্গী জেনারেলরা বাংলাদেশে সম্মুখে ও গেরিলা যুদ্ধে আটকা পড়িয়া নতুন নতুন চালবাজী করিয়া পরাজয়ের গ্রানিকে চাপা দিবার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হইয়াছে। তাই বাংলাদেশের কেদো মাটিতে আটকা পড়া পাক জাঙ্গীশাহীকে টানিয়া তুলিবার জন্য ইয়াঙ্কি নিক্সন ও তাহার সাঙাতরা তলে তলে দিশেহারা ইয়াহিয়া ও তাহার সাগরেদদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ও পশ্চিম দিয়াছে। তাহদেরই পরামর্শ অনুযায়ী ইয়াহিয়া সীমান্তে বিপুল সৈন্য সমাবেশ করিয়া ভারত ভূখণ্ডে অনবরত গোলাগুলি নিক্ষেপ করিতেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে কপট ইয়াহিয়া জঘন্য মিথ্যার বেসাতি করিয়া ভারতীয় হামলা’ জিগির তুলিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও পাক বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধকে পাক-ভারত অঘোষিত যুদ্ধ বলিয়া খেকি কুকুরের মতো তার স্বরে চীৎকার করিতেছে। সঙ্গে সঙ্গে গণহত্যা ও গণতন্ত্র হত্যার আন্তর্জাতিক নায়ক নিক্সন ও তাহার গেউরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ বলিয়া উত্তেজনা প্রশমনের জন্য উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অযাচিত উপদেশ বর্ষণ করিতে শুরু করিয়াছে। ইহাদের এইরূপ অযাচিত উপদেশের মধ্যে যে হীন চক্রান্ত জড়াইয়া রহিয়াছে তাহা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশে দীর্ঘ আট মাস ধরিয়া ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ড যখন বিনা বাধায় সংঘটিত হইয়াছে তখন এই সব উপদেশ বর্ষণ করা হয় নাই। বরং অর্থ অস্ত্র ও পরামর্শ দিয়া ইয়াঙ্কি নিক্সন বাংলাদেশকে চূর্ণবিচূর্ণ ও ধ্বংস করার প্রত্যক্ষ মদত দিয়াছে। মাও-নিক্সন এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার যুপকাষ্ঠে বাংলাদেশকে বলি দিয়া উপমহাদেশে পানি ঘোলা করিয়া তাহদের হীন জাতীয় স্বার্থ লুটিবার তালে মত্ত হইয়াছে। ইহাদের কাছে মানবতা ও বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। এদিকে মুক্তিবাহিনীর মৃত্যু-ভাবনাহীন যোদ্ধাদের অব্যর্থ ও শাণিত অস্ত্রের আঘাতে বাংলাদেশে পাষণ্ড ইয়াহিয়ার জল্লাদ বাহিনী যখন কদলী বৃক্ষের মতো ঢলিয়া পড়িতেছে তাহদের সমর বৃহগুলো যখন ফুৎকারে উড়িয়া যাইতেছে তখন ইয়াহিয়ার প্রভুদের মধ্যে কেউ কেউ আন্তর্জাতিক আমলাদের বৈঠকখানা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী অধিবেশন ডাকার তোড়জোড় করিতেছে। যদি নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ভারতকে জড়িত করিয়া মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত সংঘর্ষ হিসাবে রূপ দিয়া বিরোধ মীমাংসার