পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

432 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ পাক তাসের ঘর আমার দেশ ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১ ভেঙ্গে যাচ্ছে বাংলাদেশঃ ১৩শ সংখ্যা পাক তাসের ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে যশোর-খুলনা-কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরের শতকরা ৮০ ভাগ মুক্তঃ সকল জেলা থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্নঃ কিশোরগঞ্জ শহর অবরুদ্ধঃ ফেনীর কাছে বহু শত্রসেনা হতাহত ও ধৃতঃ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারঃ ছাগলনাইয়া মুক্ত ফেনীর দিকে মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযান (নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) লাখো মানুষের রক্তস্রোত পেরিয়ে আজ আমরা মুক্তির নবদিগন্তে উপনীত হতে চলেছি। হানাদার পাক নাজিরা পৃথিবীর জাগ্রত বিবেকের ঘৃণা ও আক্রোশ এবং বাংলার মরণজয়ী বীর মুক্তিবাহিনী ও মুক্তিপাগল জনতার দূর্বার আঘাতে তৃণখণ্ডের মতো ইতিহাসের অন্ধকার আবর্তে তলিয়া যাচ্ছে। নদী মেখলা বাংলার নরম মাটিতে জল্লাদ ইয়াহিয়ার কসাই বাহিনী লাখ লাখ বাঙ্গালীর তাজা রক্ত দিয়ে রঞ্জিত করে যে শোষণ-সৌধ নির্মাণ করেছিল মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আঘাতে তা আজ তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। রক্তাক্ত বাংলার চারদিক থেকে মুক্তিবাহিনী পাক নরপশুদের অবরুদ্ধ করে ঘায়েল করে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছেন রাজধানী ঢাকার দিকে। তাদের পেছনে হানাদারমুক্ত এলাকাগুলোতে রক্তখচিত বাংলার পতাকা পত পত করে উড়ছে। মুক্ত স্বদেশের মানুষের মনে বয়ে চলেছে বিজয়ানন্দের হিল্লোল। ফেনীর তিন দিকে মুক্তিবাহিনী গত তিনদিনে মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে ছাগলনাইয়া থানা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করে দুর্বার গতিতে ফেনী শহরের দিকে এগিয়ে গেছেন। ছাগলনাইয়া থানার দক্ষিণাংশে চাঁদাগাজী ও মুন্সিরহাটে দুটি প্রচণ্ড সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী বহু খানসেনা ও রাজাকারকে হতাহত করেছেন। মুক্তিবাহিনীর অব্যাহত আক্রমণের প্রচণ্ডতায় ভীত সন্ত্রস্ত পাক পশুরা অনবরত পিছু হটতে হটতে এখন ফেনীতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্ৰাণ ভয়ে পালিয়ে যাবার সময় তারা বহু অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ ফেলে যায়। এখন ফেনী শহর ছাড়া-সমগ্র ফেনী মহকুমা কার্যত মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন। পাবর্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বাংশ মুক্তঃ পাক হেলিকপ্টার ভূপাতিত গত কয়েকদিন মুক্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়ের উত্তর পূর্বাংশ ও তবলছড়ি এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে বহু খানসেনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে উক্ত এলাকা মুক্ত করেছেন। মীরেরশরাইতে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ১০ জন খানসেনাকে হত্যা ও বেশ কয়েকজন খান সেনাকে আহত করেছেন। চট্টগ্রাম শহরে গেরিলা তৎপরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। রামগড় এলাকায় একটি পাক হেলিকপ্টারকে মুক্তিবাহিনী গুলি করে ভূপাতিত করেন।