পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

443 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সবশেষে শ্রীমতি গান্ধী যে-দেশ সফর করেন তাহলো পশ্চিম জার্মানী। এই পশ্চিম জার্মানীতেই শ্রীমতি বাংলা সমস্যাটি পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং তার সমাধানও তাকেই করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সমস্যাকে কেন্দ্র করে পাক-ভারত উপমহাদেশে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা। এই উত্তেজনা উপশমকম্পে ব্রান্ট তাঁর সীতিম ক্ষমতা ও প্রভাব খাটাতেও রাজী হয়েছেন। পূর্ব বাংলার সংকট নিরসনে শেখ মুজিবের মুক্তিকে প্রাথমিক করণীয় হিসেবে বিবেচনা করে মুজিবইয়াহিয়া আলোচনার প্রয়োজন বলে চ্যান্সেলার ব্রান্ট অভিমত প্রকাশ করেন। এ উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে একটি চিঠি দেবেন বলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন। উইলি ব্রান্টের এই উদ্যোগ সফল হতে পারে। কেননা পশ্চিমের বহু সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রই পশ্চিম জার্মানীর সাথে অনেক দিন পর্যন্ত কোন সম্পর্ক রাখেননি। কিন্তু ব্রান্ট ক্ষমতাধীন হবার পর থেকেই বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে লেনদেনের সম্পর্কও গড়ে ওঠে। আমরা জানি বহুদিন ধরেই জার্মান সমস্যা একাধিকবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকী দিয়েছে। কিন্তু সেই জার্মান সংকটও উইলি ব্রান্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ফলে সমাধা হয়েছে। উইলি ব্রান্ট অনেক কথাই বলেছেন। কিন্তু একটি বারের জন্যেও তিনি বাংলাদেশ সমস্যাকে পাক-ভারত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেননি। বৃটেন আমেরিকার মত পাক-ভারত আলোচনা কিংবা ভারতের মাটিতে রাষ্ট্রসংঘ পর্যবেক্ষক স্থাপনের পরামর্শও ব্রান্টের মুখ দিয়ে বেরোয়নি। সবগুলো দেশের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটুকু বলা যায় যে শ্রীমতি গান্ধীর এই সফর বৃহৎ শক্তিবর্গের চোখ খুলে দিয়েছে। খোদ আমেরিকা এবং বৃটেনও অনুধাবন করতে পেরেছ, প্রায় এক কোটি লোক যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে তা কিছুতেই ভারতের অভিসন্ধিমূলক প্রচারণা নয়, এটি একটি বাস্তব সত্য। মুক্তিযোদ্ধারা সত্যি সত্যিই স্বাধীনতা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে এটা বোঝা যায় যে বৃহৎ শক্তিবর্গ এখন সত্যি সত্যিই পাকিস্তানের সমর নায়ক ইয়াহিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করছেন যাতে করে ইয়াহিয়া বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসেন এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। এ ব্যাপারে পশ্চিমী রাষ্ট্রবর্গ সকলেই একই সুরে গাইতে শুরু করেছেন। শ্রীমতি গান্ধীও পশ্চিমা শক্তির কাছে এরকম কিছুরই প্রত্যাশা করেছিলেন।