পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ “প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী অভিযান ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১ রক্ত’ ১ম বর্ষঃ ১ম সংখ্যা “প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্তহক না পথের বাধা প্রস্তর-শক্ত, অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে একদিন সে পাহাড় টলবেই; আমাদের সংগ্রাম চলবেই” বাংলাদেশের অগ্নিপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল অস্তিত্বে যেন তাদেরই একান্ত সান্নিধ্যে অনুভব করেছিলেন যারা নিঃশেষে রক্ত বিসর্জনের ভেতর দিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশকে দখলদার পাকিস্তানী দুশমনের শৃঙ্খলমুক্ত করবে। তাই ৭ই মার্চ তারিখে বাংলাদেশের বৃহত্তম জনসভায় তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, “আমরা যখন রক্ত দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো- কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করেই ছাড়বো।’ রক্ত দিয়েছে- আরও অনেক রক্ত দিয়েছে শিশু-বৃদ্ধ নরকারী বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র অগণিত মানুষ। কত রক্ত দিয়েছে বাঙালী, জানতে চাও যদি ইতিহাসের তথ্য-লিপিকার, জিজ্ঞাসা করো বাংলার তৃণ-মাঠ পথ-ঘাট নদীস্রোতের কাছে। রক্ত দিয়েছে বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্ৰীষ্টান। এ রক্ত আমাদের আত্মপরিজনদেরই শুধু নয়- এ রক্ত আমাদের পিতৃ-পিতামহের। বাংলাদেশের শত শত নদীধারা সফেন তরঙ্গ-ললাটে সন্তানবিধুরা চিরক্ৰন্দনময়ী বঙ্গজননীর জর্জরিত হৃৎপিণ্ডের সহস্র ক্ষতমুখে উৎসারিত রক্ত-চুম্বন মেখে উচ্ছসিত হয়ে উঠেছে, যুগান্তকালের নিস্তব্ধ কণ্ঠে সূর্যশীর্ষ মহিমার কম্বুধ্বনি তুলে প্লাবন হয়ে ছুটে গিয়েছে সাগর থেকে সাগরে, সমুদ্র থেকে সমুদ্রে। মহামানুষের অবিশ্রান্ত প্ৰাণ-প্রবাহে একাত্ম হয়ে মিশে গিয়েছে অনন্ত ভবিষ্যতের শুভাশীষ নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর আশ্বাসদীপ্ত বাংলাদেশের নির্ভয় ছাত্র-তরুণেরা স্বাধীনতার যে পতাকা সেদিন বাস্তবায়িত করেছিল, ২৩শে মার্চ তারিখে বাংলাদেশের প্রান্ত থেকে প্রান্তান্তরে যে পতাকার বর্ণে বর্ণে তারা নীলাম্বরের উদার স্পর্শ মাখিয়েছিল সে পতাকা আজ বিশ্বের বিস্ময়ের প্রতীক। আমরা জানি সারা বিশ্বের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে যুদ্ধজয়ী বাঙালীর জাতীয় পতাকার উদ্দেশ্যে নতশির শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে। ২৫শে মার্চের পর বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর সহকর্মী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তাঁর ছায়ানুগামী- প্রখর দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত ছাত্র-তরুণ এবং বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার পাকিস্তানী