পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

448 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড তখন পিকিং-এ। প্রতিনিধি পাঠিয়ে পাকিস্তান আবার ইঙ্গিতে এটাই প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বোঝাতে চেয়েছে যে, তোমরা যদি অস্ত্র সাহায্য বন্ধ করো তাহলে আমরা পুরোপুরি চীনের দিকে চলে যাবো। প্রসঙ্গত, উল্লেখযোগ্য যে ১৯৬৫ সালেও পাকিস্তান অনুরুপ চাল ছেড়ে বেশ কিছুটা সুবিধা আদায় করেছিল। এবার দেখা যাক ভুট্টোর পিকিং সফরে আলোচ্য উদ্দেশ্যগুলো সাধিত হলো কিনা। পিকিং-এ ভুট্টোর মিশন পৌছানোর পরই আলোচনা শুরু হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, সফরের আগেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেছিলেন যে চীন জরুরী তলব করাতেই প্রতিনিধ দলটি পিকিং-এ যায়। অবশ্য এই সম্ভাবনাটিকেও যে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না তার প্রমাণ চীনা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য। তাঁর বক্তব্যে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধানের উপর। অস্ত্রের ব্যাপারে চীন সম্পূর্ণ নীরব। পূর্ব বাংলার গণহত্যা সম্পর্কে কিছু না বললেও চীন এটুকু বলেছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার অন্যায় সুযোগ নিয়ে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। পাক-ভারত যুদ্ধ বাধলে চীন সরাসরি জড়িয়ে পড়বে না বলেও চীনের বক্তব্য উল্লেখ করা হয়। চীনের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ প্রশ্নে চীনের নীতি বর্তমান সময়ে অনেক পালটেছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশে নজীরবিহীন গণহত্যা শুরু হবার পর পাক জঙ্গী সরকারকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করলেও চীন বাংলাদেশে তার অনুগামীদেরকে জঙ্গীশাহীর বিরদ্ধে যুদ্ধ করবারই নির্দেশ দেয়। বর্তমান সফর সম্পর্কে জঙ্গীশাহী জোরগলায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও সত্যিকারভাবে তারা মোটেই খুশী হতে পারেনি। নিউজ উইকের সাংবাদিকের কাছে ইয়াহিয়ার চীন সম্পর্কিত ঘোষণাও আসার প্রমাণিত। উপরন্তু যে অস্ত্রেই ভিক্ষার এই পিকিং সফরে সে অস্ত্রের প্রশ্নে পিকিং পুরোপুরি নিশ্চপ। সুতরাং যে সকল উদ্দেশ্য নিয়ে ভুট্টোর পিকিং সফর তার কোনটাই ত হলো না উপরন্তু বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছে পুনরায় ধর্না দেয়ার পরও সম্পর্ক রুদ্ধ হয়ে গেলো। কেননা ভুট্টো আগেই বলেছেন যে জাতিসংঘ থেকে সমস্যা সমাধানের পথ কোন দিনই খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর সে জন্যেই আমরা পিকিং এসেছি।