পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

459 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড পৃথিবীর টেলিভিশন কেন্দ্রসমূহ, তাবৎ রেডিও ষ্টেশনগুলি থেকেও বারবার প্রচারিত হয়েছে- হচ্ছে বাংলাদেশ সমস্যা ও তদসংক্রান্ত সকল পরিস্থিতির। আন্তর্জাতিক রাষ্ট্ৰীয় সমঝোতা কেন্দ্র জাতিসংঘের সাহায্য ও ত্রাণ কমিটির সাহায্য পেয়েছে বাঙালীরা। খোদ আমেরিকা থেকেই ঐ সঙ্ঘের ত্রাণ কমিটি প্রধান প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খাঁ স্বয়ং তদন্তে এসেছিলেন ভারতে। অধিকৃত বাংলাদেশ যাকে ইয়াহিয়ার প্রচারযন্ত্র আজও পূর্ব পাকিস্তান বলে প্রচারে সরগরম, তাও পরিভ্রমণ করেছেন প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খাঁন। তার এই পরিভ্রমণ ও তদন্তের পর জাতিসংঘের সদর দফতরে এবং সাংবাদিক সম্মেলনে কি কি বলেছিলেন তা এত বেশীদিনের কথা নয় যে আমরা ভুলে যাব। পৃথিবীর সমস্ত লোক প্রিন্সের মুখে শুনেছে যে, বাংলাদেশ থেকে এত ব্যাপকসংখ্যক শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন যে, তার দায়িত্ব ভারত সরকারের একার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়- পৃথিবীর মানবতাবাদী প্রতিটি সরকারেরই বাঙালীদের ত্রাণ কার্যে এগিয়ে আসা উচিৎ। স্বয়ং রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল বলেছেন, বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসের কলঙ্কিততম অধ্যায় হল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী। তিনি বলেছেন, আরও অধিক হারে এই দুর্দশাগ্রস্ত জাতিকে সাহায্য করতে হবে এবং সেটাই আজকের পৃথিবীর নৈতিক দায়িত্ব। তদন্ত শেষের রিপোর্টে প্রিন্স সদরুদ্দীন আরও বলেছেন, সম্মানজনক রাজনৈতিক সমাধান ও নিরাপত্তার অটুট আশ্বাস না পেয়ে শরণার্থীরা দেশে ফিরে যাবেন না। শুধু প্রিন্স সদরুদ্দীন নয় পৃথিবীর মানবতাবাদী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিরা সাংবাদিকরা যাঁরাই শরনার্থী শিবির পরিদর্শনের জন্য ভারতে এসেছেন তাঁরা সবাই একবাক্যে বলেছে যে, উপযুক্ত সময়ে সম্মানজনক পরিস্থিতিতেই শুধু মাত্র বাঙালীরা তাঁদের দেশে ফিরে যাবেন, তার আগে নয়। উপরোক্ত মন্তব্য তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁদের স্ব-স্ব স্বার্থের নিশ্চয়তা বিধানের সূত্র হিসাবে উপস্থিত করেননি এবং শরণার্থীরা যা তাঁদেরকে বলেছেন, বিশ্বের বিবেকবান এই মানুষগুলি তাই বিশ্বের কাছে অকপটে তুলে ধরেছেন মাত্র। এতসব ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তদন্ত কমিশন নিয়োগ করে বাংলাদেশ সমস্যার গভীরতা মাপার প্রশ্ন তোলেন তখন কি একটি প্রশ্ন সংগত ভাবেই করা চলে না যে, তাহলে বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী এই ডামাডোলের বাজারে আমেরিকা গত ক’মাস শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতি প্রবাহ কিন্তু এই তথ্য স্বীকার করে না। বরং ঘটনার পরস্পর এই কথাই বলে যে, বাংলাদেশ সমস্যায় যারা বিশেষভাবে বিচলিত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তান অখণ্ড থাকবে, না তা ভেঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ জন্ম নেবে এই প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী জনমত দুটুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেছে। কিছু কিছু স্বার্থপন্থী, যারা পাকিস্তানের অখণ্ডতায় নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উপাদান দেখেন, তাঁরা বাঙালীদের অপ্রতিরোধ মুক্তিযুদ্ধের আয়ুষ্কাল বেঁধে দিয়ে তার ব্যর্থতার কারণগুলি বিশ্লেষণ করতে যাওয়ার শখের মত, বোকার স্বর্গে বাস করছেন না এমন নয়। অবশ্য এক বৃহৎসংখ্যক ইতিহাস সচেতন মানুষ এর প্রতিবাদ করেছেন। তাঁরা বলেছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ নিশ্চিত। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র মার্চ পরবর্তী কালে নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানের পক্ষে এমন সব কাজ করেছে যাতে করে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, মার্কিনীরা আর যাই হোক পাকিস্তান ভেঙ্গে যাক তা চায় না। আর তা চায় না বলেই সে পাকিস্তানী জল্লদদের হাতে তুলে দিয়েছে ব্যাপক হারে মানুষ মারার অস্ত্র। একথা অবশ্য ঠিক যে পাকিস্তান সৃষ্টির পর গোটা পাকিস্তানে এমন কোন রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক মার্কিনী পেটুয়া বগুড়ার মোহাম্মদ আলীর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর গদীতে বসার পর। এরপর থেকে মার্কিন সরকার পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা শুরু করে। এ প্রসঙ্গে পূর্ব বাংলার ঐতিহাসিক '৫৪এর সাধারণ নির্বাচনোত্তর কালে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টার কুখ্যাত সাংবাদিক কলহন-এর নাম উল্লেখযোগ্য। সে যাই হোক আমেরিকা যে কোটি কোটি বাঙালীর এই চরমতম বিপদের দিনে পাকিস্তানী বৃহৎ