পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

463 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ পাক দূতাবাসগুলিতে শয়তানের অভিযান ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১ অনুচর ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা পাক দূতাবাসগুলিতে শয়তানের অনুচর সবসময় চড়ে থাকে। এক বৃটিশ সংবাদদাতার মতে গত তিন মাস ধরে তিনি নাকি ভয়ংকর রকম চটে আছেন। এ সময়ের মধ্যে একবারও নাকি শান্ত অবস্থায় তাঁকে দেখা যায়নি। এই মনোবৈকল্যটা তাদের বাঙালীবিদ্বেষ হিসেবে ভারী উদ্ধত এবং অশোভনভাবে মার্চের পচিশ তারিখের পর থেকে প্রকাশ পেতে আরম্ভ ইয়াহিয়া বলে ভাবতে শুরু করেছে। তাদের ভাবভঙ্গী, আচার-আচরণ সবকিছুই জেনারেল ইয়াহিয়ার মতো। নয়াদিল্লী থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজী সাপ্তাহিক পত্রিকা দিল্লীর পাকিস্তান হাইকমিশনের জনৈক ব্রিগেডিয়ার গোলাম হাসানের কাহিনী প্রকাশ করেছেন। এই গোলাম হাসান লোকটির নামের আগে ব্রিগেডিয়ার দেখে যে কেউ তাকে সামরিক বাহিনীর লোক মনে করতে পারে। আসলে সে হচ্ছে পাকিস্তান হাইকমিশনের এ্যাটাচি। কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লীর পাকিস্তানী হাইকমিশনের বাঙালী কর্মচারীরা বাংলাদেশ পাকিস্তানী কর্মচারীরা তাঁদের সামনে নানা বাধার সৃষ্টি করে এবং প্রলোভনে মুগ্ধ করতে চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও এই হাসানই বাঙালী কর্মচারীদের বলেছিলো, মনে রাখবে আমি পাঠান, দরকার হলে তোমাদের গুলী করে মারবো। বাঙালী জনাব হোসেন আলীকে পাকিস্তান হাইকমিশনে গুম করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মুক্তির জন্য বার বার আবেদন নিবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান হাইকমিশন এই আবেদন নিবেদন এবং বিক্ষোভে কোনরকম কর্ণপাত করেননি বললেই চলে। পিতার মুক্তির জন্য জনাব হোসেন আলীর দুই শিশু পুত্রের প্রার্থনাও বৃথা গেছে। বস্তুতঃ বাঙালী কর্মচারী হোসেন আলী পাকিস্তান হাইকমিশনের জিন্দানখানায় বন্দী। তাঁকে মুক্ত করা এখনও সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ঘোষণার পর থেকে প্রতিটি দূতাবাসের বাঙালী কর্মচারীবৃন্দ একে একে দূতাবাস ছেড়ে চলে এসেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদান করেছেন। জনাব হোসেন আলীর ভাগ্য এবং হাসানের পাশবিক কীর্তির কথা প্রকাশ হওয়ার পরে, কারো অনুমান করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, দূতাবাসগুলোতেও পাকিস্তান ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। যে সকল বাঙালী বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদান করতে ব্যাগ্রভাবে ইচ্ছুক তাঁদেরকে অনেক ক্ষেত্রে জোর করে আটক রাখা হয়েছে। নয়াদিল্লীর পাকিস্তানী হাইকমিশনের ঘটনাই তার প্রমাণ। নথিপত্র ঘাঁটলেই তার বিস্তর প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে প্রকাশ। বাঙালীবিদ্বেষই ছিল তার পদোন্নতির মুখ্য সোপান। ১৯৬৯ সালের জঙ্গীলাট আয়ুবের আমলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পর্দার অন্তরাল থেকে যারা কলকাঠি নেড়ে ছিল এই গোলাম হাসান তাদের একজন। আগরতলা মিথ্যা মামলার ঠেলায় আয়ুব খানকে সিংহাসন ছাড়তে হয়। কিন্তু গোলাম হাসান ইয়াহিয়ার সুনজরে পড়ে যায়।