পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

14 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় জয়বাংলা ৯ এপ্রিল, ১৯৭১ ৯ম সংখ্যা আমরা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করিতেছি। অত্যাচার, অনাচার, অবিচার দূর করিয়া স্বাধীনভাবে শির ও মেহেরবাণীতে জয় আমাদের হইবেই। আমাদিগকে ঠেকাইবার শক্তি (এক আল্লাহ ছাড়া) আর কাহারও নাই। যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যান্য নিরস্ত্র লোক বর্বরদের হাতে নিহত হইয়াছেন তাহদের সকলের আত্মার শান্তির জন্য আমরা পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা জানাইতেছি। গতকল্যকার বিশেষ সংখ্যায় বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হইয়াছে। প্রতিটি খবরই বিভিন্ন মহল হইতে সংগ্ৰহ করিয়া নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যাচাইয়ের পরেই পত্রিকায় প্রকাশ করা হইয়াছে। যতগুলি ‘ফ্রন্টের উল্লেখ রহিয়াছে প্রতিটি অঞ্চলই ব্যাপকভাবে পরিদর্শন করা হইয়াছে। উহা ছাড়াও সমস্ত শহরও একাধিকবার চষিয়া বেড়ান হইয়াছে। একাজে দ্বিচক্রযানের পিছনে বসাইয়া ঘোরানোর এবং গাইডের কাজ করিবার জন্য জনাব আলমগীর হোসেন সাহেবকে এবং দ্বিচক্রযানের খোরাক এক গ্যালন পেট্রোল যোগাড় করিয়া দিবার জন্য মুক্তিযোদ্ধা দোস্ত পেস্তাকে ধন্যবাদ জানাইতেছি। চূড়ান্ত বিজয় সমাসন্ন। এখন সকলকেই আরও বেশী হুশিয়ার থাকিতে হইবে। অনৈক্য, অরাজকতা, হিংসা, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি কোন মতেই বৃদ্ধি পাইতে দেওয়া চলে না। পশ্চিমা বর্বরেরা যতখানি ক্ষতি করা সম্ভব করিয়াছে। কিন্তু আমরা যদি উপরি-উল্লিখিত পাপগুলিকে (আমরা ঐগুলিকে পাপ বলিয়া মনে করি) প্রশ্রয় দেই বা নির্মুল না করি তাহা ইহলে যাহা অবশিষ্ট রহিয়াছে তাহা হয়ত বা আমাদের নিজেদের হাতেই ধ্বংস হইবে। ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শান্তির গুরুত্ব যুদ্ধবিশারদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, জনপ্রশাসনবিদ যাহাকেই জিজ্ঞাসা করুন না কেন একবাক্যে স্বীকার করিয়া নিবে। বিজয়ের মুহুর্তে এবং বিজয় পরবর্তী সময়ে ঐগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। পশ্চিমা বর্বরদের অত্যাচারে সারা বাংলাদেশে এমন লোক পাওয়া দুষ্কর যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই। চূড়ান্ত বিজয়ের পরে পশ্চিমা বর্বরদের চিহ্ন একরকম থাকিবে না। এদিকে যাহারা উহাদের অত্যাচারে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে বা হইতেছে তাহদের একটি অংশ ধীরে ধীরে হিংস হইয়া উঠিতেছে। এখনই ইহাকে বাধা না দিলে জয়ের শেষে হিংসাকে বাধা দেওয়া কাহারও পক্ষে সম্ভব হইবে না। একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন- যুদ্ধের শেষে একরকম নিশ্চিহ্নই হইয়া যাইবে। কিন্তু হিংসা শুধু থাকিবেই না-নিত্যনতুন বর্বরতার খবর কানে আসিবার (সমস্ত বর্বরতার সঠিক খবর এখনও পাওয়া যায় নাই) সঙ্গে সঙ্গে উহা আরও বৃদ্ধি পাইবে। এই পুঞ্জীভূত হিংসা কোন দিকে ধাবিত হইবে? দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরা ত ওঁৎ পাতিয়া রহিয়াছে-যেদিকে ইচ্ছা হিংসাকে দিক পরিবর্তন করাইবার চেষ্টা ক্রটি করিবে না। আমাদের তৃতীয় সংখ্যায় (১৮ই চৈত্র, ১৩৭৭) আমরা ফরাসী বিপ্লবের উদাহরণ দিয়াছিলাম। ইতিহাস একেবারে অস্বীকার করা চলে না-যদি তাহাঁই চলিত তবে আর উহা নিয়া মাথা ঘামাইত না-আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা আন্দোলন ফরাসী বিপ্লব বা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কাহিনী পড়িত না।