পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

471 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় অভিযান ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ অনিবার্য ঐতিহাসিক পরিণতি ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা সম্পাদকীয় অনিবার্য ঐতিহাসিক পরিণতি ইয়াহিয়া হিটলারী কায়দায় যুদ্ধের আগে যথেষ্ট হুমকি এবং হন্বিতম্বি করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুই মহাপ্রভুর কাছ থেকে অবারিত অস্ত্র পাবার ফলে অপ্রত্যাশিতভাবে সত্যিসত্যিই এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত আক্রমণ করে বসল। কিন্তু অস্ত্র দিয়েই শুধু যুদ্ধ হয় না, আসল শক্তি আসে যোদ্ধাদের ন্যায়বোধ, দেশাত্মবোধ সর্বোপরি জনসাধারণের সমর্থনের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান এগুলোর কোনটিই পায়নি, তাছাড়া ణా జాగా శాణాళాణా శాతాశిణా হয়ে | এদিক থেকে আদর্শবাদী গণতান্ত্রিক ভারতের সেনাবাহিনী অনেক বেশী শক্তিশালী। সে কারণেই যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানেও পাক সৈন্যদের পরাজয় বরণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে গত ৮ মাস ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রচণ্ডভাবে মার খেয়ে জনগণের কাছ থেকে বৈরী আচরণ পেয়ে পাক সেনারা বিপর্যস্ত, অবসন্ন এবং ক্লান্ত। দীর্ঘ আট মাসের যুদ্ধে তারা মুক্তি যোদ্ধাদের দমন করতে পারেনি বরং দিনে দিনে তা বেড়ে উঠেছে। যতদিন যাচ্ছিল পরাজয় আসন্ন হয়ে আসছিল। এ নিশ্চিত পরাজয়ের প্রতি সুদূরপ্রসার দৃষ্টি পাক জোয়ানদের না থাকলেও উধ্বতন সামরিক অফিসারদের অনেকে তা অনুমান করতে পেরেছিল। জুন মাসের শেষের দিকে বিদেশী এক সাংবাদিকের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশে উপ-পাক সামরিক অধিকর্তা স্বীকার করেছিল- We are fighting a lost battle এ বক্তব্য শুধুমাত্র একটি জেনারেলের বক্তব্য নয়, হাজার মাইল দূর থেকে বিদেশে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে প্রতিটি পাক জোয়ান ও অফিসারদেরই আকুতি। নৃশংসতম আচরণ করে, লোভ দেখিয়ে পাক বাহিনী জনগণকে তাদের দৃঢ়তা থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ফলে তারা বাংলাদেশের আশা গোড়া থেকে ছেড়ে দিতেই শুরু করে। গত পনের দিন বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যুক্ত আক্রমণের মুখে পাকসৈন্যরা কোন বাধা না দিয়ে কেবল পশ্চাদপসরণ করে চলে। রুখে দাঁড়ালে এত কম সময়ে আমাদের এ বিরাট বিজয় সম্ভব হতো না। কিন্তু আট মাস যুদ্ধে লিপ্ত ভাড়াটিয়া সৈন্যদের এ শক্তির মোকাবিলা করা অসম্ভব। তাছাড়া পাক সেনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছে জনগণের জন্য তারা যুদ্ধ করেছে না। তারা যুদ্ধ করছে গুটি কয়েক সামরিক জেনারেলের জন্য। জনগণ কর্তৃক ঘৃণিত হচ্ছে, ফলে যুদ্ধ করার অনুপ্রেরণা, মনোবল কোনটাই তারা পাচ্ছে না। কাজেই তারা পশ্চাদপসরণ করে বাঁচার পথ নেয়াটাই সমীচিন মনে করেছে। বড় বড় প্রভুরা ভয় দেখিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপ ঘটিয়ে পাকিস্তানকে এ থেকে মুক্ত করবে এ সম্ভাবনাও এখণ সুদূরপরাহত।