পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

473 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র I তারিখ মার্কিন সপ্তম নৌবহর অভিযান I ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ভয় পাইয়ে দেবার কারসাজী মাত্র ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা ভয় পাইয়ে দেবার কারসাজী মাত্র বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহার এগিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ভারতবিরোধী বক্তব্য, অন্যদিকে ভারত সীমান্তে চীনা সৈন্যের তৎপরতা প্রভৃতি পাকিস্তানে দুই প্ৰভু, গণচীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতবিরোধী যৌথ উদ্যোগ বলে মনে হয়। খবরে প্রকাশ, সপ্তম নৌবহরের আণবিক শক্তিসম্পন্ন বিমানবাহী জাহাজ ‘এন্টারপ্রাইজ হংকং-এর কাছে অবস্থান করছে। নির্দেশ পেলে সেটি ঢাকাস্থিত গুটিকয়েক আমেরিকানকে উদ্ধার করার জন্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হবে। কিন্তু ঢাকা, করাচী ও রাওয়ালপিণ্ডি থেকে বৃটিশ ও অন্যান্য দেশের নাগরিক ও রাষ্ট্রসংঘের সদস্যদের বেসামরিক বিমানে করে তাঁদের স্বদেশে নিয়ে আসবার ব্যবস্থা হয়েছে। অথচ গুটি কয়েক নাগরিকের জন্য সপ্তম নৌবহরের প্রেরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুরভিসন্ধিমূলক আচরণ বলে মনে হয়। নিক্সনের পাকিস্তানের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব থাকা সত্ত্বেও মার্কিন জনমত ও বিশ্ব জনমত বিরুদ্ধাচরণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে সামিল হবার ঝুঁকি নেবার সম্ভবনা এখনও অবধারিত হয়ে ওঠেনি। কিন্তু প্রশ্ন হল জনগণকে উদ্ধারের জন্যে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী নৌবহরের প্রয়োজন কি ? অনেকে মনে করছেন যে সপ্তম নৌবহরের এই অগ্রাভিযানের প্রসঙ্গটি ১৯৫৪ সনের পারস্পারিক পাক মার্কিন-সামরিক চুক্তির সাথে সংগতিপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীও এ ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রেখেছেন গত ১২ই ডিসেম্বর। তিনি বলেছিলেন, “আমি শুনতে পাচ্ছি কিছু দেশ আমাদের হুমকি দিচ্ছে এবং বলছে, তাদের সাথে পাকিস্তানেরও কিছু চুক্তি রয়েছে। এ ইঙ্গিতে তিনি নাম না করলেও মার্কিন দেশকেই উদ্দেশ্য করে বলেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, এ যুক্তি ছিল, যতদূর তিনি জানেন, কমু্যনিজম রোধ করবার জন্য, গণতন্ত্র ও ন্যায়বোধের বিরুদ্ধে নয়। আর যদি এর জন্যই হয়ে থাকে তাহলে এ দেশটি এতদিন ধরে বড় বড় মিথ্যা কথাই বলে আসছে। আনবার চেষ্টা করবে না। করলে সোভিয়েট রাশিয়াসহ মার্কিনবিরোধী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চুপ করে থাকবে না, তারা সবাই মার্কিনবিরোধী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। শক্তির ভারসাম্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়ের সম্ভাবনাই বেশী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীন পক্ষ নিয়ে এতদূর এগিয়ে এলে আদর্শবাদের দিকে থেকে সে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। বিশ্বজনমত তার বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধরতে কুষ্ঠা করবে না। কারণ বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বের মুক্তিকামী ও গণতান্ত্রিক দেশের বাঁচার প্রশ্নটাই প্রধান হয়ে উঠবে। চীনও আত্মঘাতী যুদ্ধে এগোবে না বলেই আমাদের ধারণা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীন কেউই বিশ্বযুদ্ধের ঝুকি নিতে অগ্রণী হবে না। কেননা এতে তাদের অস্তিত্বও বিপন্ন হতে বাধ্য।