পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

478 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ বিশ্ব পরিসরে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার অভিযান ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ দায়িতু আজ আমাদের হাতে ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা বিশ্ব পরিসরে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আজ আমাদের হাতে (অভিযান রাজনৈতিক পর্যালোচক) অবশেষে যা হবার তাই হলো। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর চোখের জল আর রক্তস্নানের সমাপ্তি ঘটলো। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নিল একটি নতুন রাষ্ট্র- স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতা সংগ্রাম যেমন একদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদীদের নাগপাশ থেকে মুক্ত করেছে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীকে অন্যদিকে তেমনি পঞ্চান্ন কোটি ভারতবাসীর আত্মার সাথে সংযুক্ত করেছে বাংলাদেশের জনগণকে। মহান ভারত এবং ভুটান এই নতুন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি জানিয়ে বিশ্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। অনেক দেশই এখনো স্বীকৃতি জানায়নি। কিন্তু তাতে ক্ষোভ করার কিছু নেই। কারণ আমাদের প্রচুর সম্পদ না থাকতে পারে, না থাকতে পারে প্রভাব কিংবা প্রতিপত্তি কিন্তু বাংলার আপামর জনতার দৃঢ়মনোবল আমাদের রয়েছে। জনগণতান্ত্রিক চীনকেও অনেক দিন পর্যন্ত বিশ্বে বিভিন্ন রাষ্ট্র মেনে নেয়নি। কিন্তু তা বলে তাঁর প্রগতি কিংবা সমৃদ্ধি শ্লথ হয়ে যায়নি। প্রতিষ্ঠিত করেছে। ধর্ষিতা, লুষ্ঠিতা বাংলাকে নবসাজে সজ্জিত করার দায়িত্ব আজ আমাদের হাতে। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ কথাটার সঠিক মর্যাদা দেবার দিন আজ উপস্থিত। নবজাত রাষ্ট্রকে নতুন ছাঁচে গড়ে তোলার আগে কতকগুলো বাস্তব সত্যকে আজ উপলব্ধি করতে হবে, যে উপলব্ধি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তোলার পথে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা যেন ভুলে না যাই যে ২৫শে মার্চ যখন পাক জঙ্গীচক্রের বর্বর পশুরা আমাদের উপর নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো তখন আজ পাড়াগাঁয়ের খেতের কিষাণ, যারা রাজনীতির মারপ্যাচ থেকে সব সময় নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতো, লড়াই-এর ময়দানে তারাই প্রথম ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রর বিরুদ্ধে। রোজকার মতো কারখানার ভোঁ সে-দিনও বেজেছিল, কিন্তু খেটে খাওয়া মজুর তার আগেই শুনতে পেয়েছিল বাংলা মায়ের করুণ আর্তনাদ। মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সে শরীক হয়েছিল শত্রহননের মিছিলে। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণিত ছাত্র শিক্ষক সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালীকে সঠিক নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিলেন মুক্তি মিছিলে। আমাদের সুদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামের ইতিহাস। আমরা মায়ের ভাষায় সম্মান রক্ষায় সংগ্রাম করেছি, নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবীতে। প্রত্যেকটি সংগ্রাম আমাদের সামনে নতুন নতুন শিক্ষা নিয়ে হাজির হয়েছে। আমরা আরও জেনেছি সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশবাদের জোয়াল থেকে মুক্ত হতে না পারলে একটা জাতির সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। বাঙালীর আত্মার সাথে যাদের নাড়ীর যোগ সেই সব মহাজ্ঞানী মহাজনদের