পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

18 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় জয়বাংলা* ১১ মে, ১৯৭১ ১ম বর্ষ : ১ম সংখ্যা সম্পাদকীয় বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ আজ ইয়াহিয়া ও তার জঙ্গীচত্রের দখলকার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ করে রুখে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত পাক-ফৌজের বিরুদ্ধে চলছে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড লড়াই। অস্ত্র বলে বলীয়ান খান-সেনাদের নায়ক টিক্কা খান ভেবেছিল মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভেঙ্গে দেয়া যাবে বাঙ্গালীর প্রতিরোধ, তাদের পরিণত করা যাবে গোলামের জাতে। কিন্তু তাদের সে আশা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে মুক্তিবাহিনীর শক্তি। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন যোগ দিচ্ছে মুক্তিবাহিনীতে। স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী নিচ্ছে খান সেনাদের খতম করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি। শত্রর কামান চিরতরে স্তব্ধ না করা পর্যন্ত থামবে না এ যুদ্ধ। কিন্তু এছাড়া কি অন্য কোন পথ খোলা ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী ও তাদের নেতাদের জন্যে? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে নানা বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে হয়। গণতন্ত্রের পথেই হয়েছিল পাকিস্তানের জন্ম, এবং তা অর্জনের উদ্দেশ্যই ছিল আপামর দেশবাসীর সাবিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি। কিন্তু বাঙ্গালী জাতি কি কোনদিন পেয়েছে মুক্তির স্বাদ? বারবার বাঙ্গালীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের উপর হানা হল একটানা হামলা। গোড়াতেই চলল বাঙ্গালীর মাতৃভাষার উপর আক্রমণ-যদিও পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মধ্যে বেশীরভাগ ছিল বাংগালী। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য প্রাণ দিতে হল আমাদের সন্তানদের, কিশোর তরুণের তাজা রক্তে লাল করতে হল ঢাকার রাজপথ। অনেক খুন, অনেক রক্ত ও অনেক সংগ্রামের বিনিময়ে ংলা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেলেও কোনদিন তার ন্যায্য মর্যাদা পেল না। ংলাভাষার বিরুদ্ধে ওদের কত ঘৃণা কত বিদ্বেষ, বাংলাদেশব্যাপী শহীদ স্মরণে গড়ে উঠা শহীদ মিনারগুলো কামান দাগিয়ে ধ্বংস করা থেকেই পাওয়া যায় তার প্রমাণ। শুধু ভাষা নয়, বাংলার সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা চালাল হামলা। আমাদের সংস্কৃতিকে গলা টিপে মারার প্রচেষ্টা চলল সুপরিকল্পিতভাবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও চললো একটানা শোষণ বঞ্চনা। বাংলাদেশকে শোষণ করে গড়ে তোলা হল পশ্চিম পাকিস্তান। ফলে একদিকে সোনার বাংলা পরিণত হল শাশানে অন্যদিকে মরুময় পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে উঠলো শস্য শ্যামলা। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরী বাকুরী সশস্ত্রবাহিনী কোথাও হল না বাঙ্গালীদের স্থান। আজাদীর চবিবশ বছর পরও সশস্ত্রবাহিনীতে বাঙ্গালীদের সংখ্যা শতকরা দশজনও ছিল না। বিদেশী সাহায্য, ঋণ প্রভৃতি ক্ষেত্রেও পেল না বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা। সাড়ে বার কোটি পাকিস্তানীর নামে এসব বিদেশী সাহায্য ঋণ ও মঞ্জুরী এনে তা ভোগ করলো দেশের মাত্র একটি অংশের মানুষ। বাংলাদেশের পাট বেচা টাকা থেকে আয় হত পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মোট শতকরা ষাট ভাগ। কিন্তু কোনদিন বাঙ্গালী এর অর্ধেকও জয় বাংলাঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক মুখপত্র। সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতিঃ আহমদ রফিক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মতিন আহমদ চৌধুরী। মুজিবনগর, জয়বাংলা প্রেস থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে আহমদ রফিক কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত।