পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

20 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সারা বাংলাদেশ ফেটে পড়ল গণ-বিক্ষোভে। সামরিক চক্র চাইল গুলি ছুড়ে এই বিক্ষোভ দমন করতে। কিন্তু পারল না। শত শত শহীদের রক্তে রাঙা হল বাংলার রাজপথ। শেখ সাহেব ঘোষণা করলেন তার অসহযোগ আন্দোলনের কথা। সারা বাংলাদেশ সাড়া দিল তাতে। ইয়াহিয়া সরকার প্রমাদ গণলেন। ইয়াহিয়া এলেন ঢাকায়। আলাপ- আলোচনা আরম্ভ করলেন শেখ সাহেবের সাথে। কিন্তু এই আলোচনা ছিল আসলে এক বিরাট ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র। আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল কেবল সময় নেওয়া। আলোচনার অছিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তত করা। ইয়াহিয়া যখন ঢাকায় আলোচনায় বসেন তখন বাংলাদেশে যা সৈন্য ছিল তাকেই যথেষ্ট ভাবতে পারেনি ইয়াহিয়া চক্র। আরো বিপুল রণসম্ভার আনা হতে থাকে এই সময়। আনা হল কমপক্ষে আরো বিশ হাজার সৈন্য। বাঙ্গালীরা যা সামান্য কিছুসংখ্যক সেনাবাহিনীতে ছিল তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হতে থাকল অস্ত্রপাতি। ই, পি, আরকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা চলল। এমনকি পুলিশ বাহিনীর কাছ থেকেও অস্ত্র-শস্ত্র সব নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হল। যাতে লোকের সন্দেহ না হয় তাই ইয়াহিয়া বলতে থাকে বিভিন্ন মন ভোলান কথা। কিন্তু আলোচনা শেষ হবার আগেই ২৫শে মার্চ রাত্রিতে ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢাকার নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের উপর। সারা দেশে আরম্ভ হয়ে যায় ফৌজি বিভীষিকা। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এমনি ভয়াবহ জঘন্য বেইমানির নজির আর নেই। হিটলারের নিষ্ঠুরতাও হার মেনেছে এদের কাছে। আওয়ামী লীগ ছয় দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে জয়ী হয়। ছয় দফার গোড়ার কথা ছিলঃ পাকিস্তানকে হতে হবে একটি গণতান্ত্রিক ফেডারেল প্রজাতন্ত্র। এই প্রজাতন্ত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবে পররাষ্ট্র (বৈদেশিক বানিজ্য বাদে) ও দেশ রক্ষার ভার। অন্যান্য সমস্ত ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে। ছয় দফার মধ্যে পাকিস্তানকে ধ্বংস করার কোন পরিকল্পনা ছিল না। ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের সাথে আলোচনায় এর সব কিছুই বাহ্যতঃ স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু পরে দেখা গেল এ সবই ছিল ভাওতা। তার আসল লক্ষ্য ছিল সময় নেওয়া। আলোচনার নামে আক্রমণের প্রস্ততি চালান। ইয়াহিয়া ও পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতা, সেনাবাহিনীর নরঘাতী আক্রমণ বাঙ্গালীকে বাধ্য করেছে অস্ত্র ধারণ করতে। স্বাধীন সরকার গঠন করতে। বাঙ্গালী আর কোন ষড়যন্ত্রে পতিত হইতে চায় না। ওদের সাথে একসাথে বসবাস করা যাবে না-এটা প্রতিটি বাঙ্গালী আজ বুঝতে পেরেছে। অস্ত্রের ভাষার জবাব বাঙ্গালী আজ দিতে প্রস্তত অস্ত্রের ভাষায়। বাংলাদেশের লক্ষ কোটি ভাই বোন এগিয়ে আস, অস্ত্রধর, বাংলার মাটি থেকে শোষক, অত্যাচারী, নিপীড়ক ও স্বৈরাচারী খান সেনাদের খতম করতে খুনের উত্তর খুন। রক্ত দিয়েই আমরা রক্তের বদলা নেব। বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছে এক নতুন পতাকা। বাংলাদেশের সবুজ প্রান্তরে পড়ছে লাল রক্তের দাগ। এ রক্তের কথা আমরা ভুলব না। বাঙ্গালীর রক্ত বৃথা যেতে দেব না। পূত পবিত্র এ রক্ত আমাদেরকে যুগ যুগ ধরে দেবে অনুপ্রেরণা। আবার বলি এ যুদ্ধ আমরা চাইনি। বাধ্য হয়েই আমরা স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা করেছি। নিজেদের সরকার গঠন করেছি আর পশ্চিম পাকিস্তানী জল্লাদদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছি। কারণ তারা আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা রাখেনি। জয় বাংলা।