পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

22 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয়ঃ জয়বাংলা ১৯ মে, ১৯৭১ আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট রাওয়ালপিণ্ডি--ইসলামাবাদসহ পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদপত্রে এই মর্মে এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক। তবে দুটি মাত্র শর্তে। তাহলো সামরিক সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সকলকে তাঁরই দেয়া একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসনতন্ত্র মেনে নিতে হবে। তারপর জাতীয় পরিষদ যে শাসনতন্ত্র রচনা করবে তাও হুবহু অন্তর্বর্তীকালীন শাসনতন্ত্রের অনুরূপ হতে হবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানী পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত সংবাদের উপর আদৌ গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যথার্থ গুরুত্ব না দিয়ে পারছি না। পশ্চিম পাকিস্তানীরা ইয়াহিয়া বা অন্য কারো দেয়া শাসনতন্ত্র গ্রহণ করবে কি করবে না, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তারা যদি রোজ কেয়াতম পর্যন্ত সামরিক আইনে শাসিত হতে চায় তাহলেও আমাদের বলার কিছু নেই। কেন না, ওটা তাদের ঘরোয়া ব্যাপার। তারা একটা আলাদা রাষ্ট্র। আমাদের বিশ্বাস, সামরিক সরকারের ইঙ্গিতেই পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলো আলোচ্য সংবাদটি গুরুত্বসহকারে বাজারে ছেড়েছে। কেননা, পাকিস্তানের সংবাদপত্রসমূহের উপর সামরিক আইনের যে খড়গ উদ্যত হয়ে আছে তার প্রেক্ষিতে কোন সংবাদপত্রের পক্ষেই সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ ধরনের কিছু প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে উল্টাপাল্টা সংবাদ ছাপিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকদের ক্ষেপিয়ে তুলবে? করেছে সেদেশে একটি শিখণ্ডি সরকার খাড়া করার। ইয়াহিয়া-ভুট্টো-টিক্কা খানও আজ সেই মহাজনী পন্থার আশ্রয় নিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, তাদের মনোবল নষ্ট করা, চূড়ান্ত বিজয় সম্পর্কে তাদের মনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা। অতীতে কোন দখলদার শক্তি সাময়িকভাবে সফল হলেও তাদের সফলতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি-ইয়াহিয়া-ভুট্টো চক্রেরও হবে না, হতে পারে না। শোষক, নিপীড়ক, বর্বব এই পশ্চিম পাকিস্তানী চক্র হয়তো ভেবেছে যে, আওয়ামী লীগকে অবৈধ ঘোষণা করে শিখণ্ডিদের দ্বারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাবে। তাই তারা আজ সওয়ার হয়েছে নূরুল আমীন, হামিদুল হক, সবুর খান, ফকা চৌধুরী, ফরিদ আহমদ, মাহমুদ আলী, সোলায়মান, খয়ের উদ্দীন প্রমুখ কুখ্যাত, গণধিকৃত, সুবিধাবাদী ও জনগণবর্জিত লোকের ঘাড়ে। এদেরকে বাঙালীরা ডাস্টবিনের আবর্জনা ছাড়া কিছুই মনে করে না। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা হস্তান্তর বা পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার সাথে বাংলাদেশের মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা যখন ক্ষমতা চেয়েছিলাম তখন তা দেয়া হয়নি। তার বদলে আমরা পেয়েছি গুলী। এতে প্রাণ দিয়েছে আমাদের লাখ লাখ ভাই-বোন, ইজ্জত হারিয়েছে আমাদের মা-বোনেরা, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়েছে লাখ লাখ পরিবার, গৃহহারা হয়েছে দেড় কোটির মত বাঙালী সন্তান। লাখো শহীদের লাশের তলায় লাখো মায়ের তপ্ত অশ্রুর অতল তলে কবর হয়ে গেছে পাকিস্তানের। আমরা ঘোষণা করেছি স্বাধীনতা। আমাদের সন্তানরা ধরেছে অস্ত্র, বহাচ্ছে খুনের বন্যা। আমরা লিপ্ত হয়েছি এক মরণপণ