পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

23 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড সংগ্রামে-হয় স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঁচনো না হয় মরবো। আজ আমাদের একটি মাত্র কথা- মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন। তাই আজও যারা ইয়াহিয়ার কাছ থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট গ্রহণের জন্য ঢাকা পিণ্ডি- ছুটাছুটি করছে, এক পা কবরে রেখে আরেক পা নিয়ে সংহতির নামে বিবৃতি দানের জন্য রেডিও পাকিস্তানে দৌড়াচ্ছে, তাদেরকে আমরা হুশিয়ার করে দিতে চাই-বাঙালীদের স্বার্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দিন আর নেই। ১৭ জন সৈন্য নিয়ে বাংলাদেশ দখলের দিন ফুরিয়ে গেছে। এক মীরজাফরকে হাত করে পলাশীর যুদ্ধ জয় করার দিন অতীত হয়ে গেছে। শত মীরজাফরকে মসনদে বসিয়েও বাংলাদেশকে আর পদানত রাখা যাবে না। বাঙালী আজ জেগেছে। শেখ মুজিবের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছে। পশ্চিমা বর্বর সৈন্যদের ঝরানো রক্তের প্রতি ফোঁটায় জন্ম নিয়েছে হাজার হাজার মুজিব। প্রয়োজনবোধে তারাই দেবে জাতিকে নেতৃত্ব। মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকদের বাংলার ব্যাপারে নাক গলানোর প্রয়োজন বা অধিকার নেই। বাঙালী জাতি নিজেকে মুক্ত করবেই করবে। টিক্কা খান ৩০ লাখ বাঙালী কেন তিনশ’ লাখ বাঙ্গালী সন্তানকে হত্যা করেও শান্তিতে ঘুমুতে পারবে না। একটি বাঙালী তরুণ বেঁচে থাকা পর্যন্তও সে অস্ত্র চালিয়ে যাবে বিদেশী হানাদারদের বিরুদ্ধে। কেন না, বাঙালী আজ বেঁচে মরতে চায় না, সে মরে বাঁচতে চায়। নূরুল আমীন, হামিদুল হক প্রমুখরা অতীতে বাংলাদেশ ও বাঙালীর অনেক সর্বনাশ করেছে। আর সে সুযোগ তাদেরকে দেয়া হবে না। নুরুল আমীন মাতৃভাষায় কথা বলার দাবী করার অপরাধে আমাদের সন্তানদের গুলি করে মেরেছে। বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার কোন অধিকার বাঙালী তাকে দেয়নি। গত ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত গণভোটে বাঙালী এ অধিকার দিয়েছিল বঙ্গববন্ধু শেখ মুজিব ও তার দলকে। “অতি বুদ্ধিমান” ও ধনকুবের হামিদুল হক চৌধুরীর পরামর্শেই যে পাক ফৌজ বর্বরের মত ঢাকাসহ বাংলাদেশের সমস্ত বস্তি এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে তাও আমাদের জানা হয়ে গেছে। অতীতেও বহুবার হামিদুল হক বাংলার স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়েছে। ফরিদ আহমদ, মাহমুদ আলী ও সোলায়মানের মত সামাজিক কীটগুলো তো দালালের দালাল তস্য দালাল। উপসংহারে আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যে, পাকিস্তান মরে গেছে। সেজন্য আমরা দায়ী নই-দায়ী ইয়াহিয়া-ভুট্টো চক্র। তার কবরও দিয়েছেন ইয়াহিয়া খান যথারীতি সামরিক কায়দায়। কবর থেকে লাশ তুলে আহাজারি করাতে কারো কোন লাভ হবে না। যারা বাঙালী হয়েও এ লাশ নাড়াচাড়ার চেষ্টা করবে তাদেরকে আমরা জাতিদ্রোহী বলেই গণ্য করবো। সাথে সাথে জাতিদ্রোহিতার যে একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তাও আমরা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেব।