পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

25 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড পৃথক বৈঠকে মিলিত হয়ে দুটো শানসতন্ত্র প্রণয়ন করবেন। তারপর যৌথ অধিবেশনে একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে। ভুট্রোকে খুশী করার জন্যই ইয়াহিয়ার পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব করা হয়েছিল। সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ ব্যাপারে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা করেন। সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মী এবং দুষ্কৃতকারীদের উপরই শুধু সামরিক বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে বলে সামরিক জান্তার পক্ষ থেকে যে দাবী করা হয়েছে তার জবাবে সৈয়দ নজরুল জিজ্ঞেস করেনঃ তাহলে ই পি আর ও পুলিশের সদর দফতরের উপর আক্রমণ চালান হল কেন? তারা তো আওয়ামী লীগ কর্মী বা দুষ্কৃতকারীর কোনটাই ছিলেন না। বাংলাদেশে ইতিহাসের বৃহত্তম গণহত্যা দেখেও বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রবর্গ আজ যে নীরবতা অবলম্বন করেছেন তার জন্য সৈয়দ নজরুল গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ লাখো লাখো নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষকে বিনা কারণে হত্যা কি ইসলাম অনুমোদন করে? মসজিদ, মন্দির বা গীর্জা ধ্বংস করার কি কোন বিধান ইসলামে আছে? বাংলাদেশের মানুষের আশ্বাস দিয়ে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ জনগণকে যেসব ওয়াদা দিয়েছিল তার প্রতিটি তারা পালন করবে। তিনি জানান যে, তাঁর সরকার ভূমিহীনকে ভূমি দান, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, বড় বড় শিল্প জাতীয়করণ করে দেশকে সমাজতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যে সমস্ত বিশ্বাসঘাতক পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করছে, তাদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাদেরকে অবিলম্বে বাংলার স্বার্থবিরোধী ও মুক্তি সংগ্রাম বিরোধী ঘৃণ্য জবাবদিহি করতে হবে। তখন তাদের প্রতি কোনরূপ কৃপা প্রদর্শন করা হবে না। উপসংহারে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন যে, নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামকে স্তব্ধ করা যাবে না। বাঙালীরা তাদের দেশকে শত্রমুক্ত করবেই করবে। তিনি বাংলাদেশের জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও মতাদর্শ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষকে আজ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লক্ষ্য অর্জনে-মুক্তি অর্জনে সহায়তা করার আবেদন জানান। কেন না, জয় আমাদের সুনিশ্চিত। কোন শক্তিই তা ঠেকাতে পারবে না।