পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6.13 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় কোন আপোষ নয় জনমত4 ২১ নভেম্বর, ১৯৭১ ৩য় বর্ষঃ ৪০তম সংখ্যা সম্পাদকীয় কোন আপোষ নয় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে এসেছে। আরও আসছে এবং আসবে। সেদিনের বিক্ষিপ্ত মুক্তিসেনারা আজ এক সুসংগঠিত আদর্শবান মুক্তিবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তাঁদের লক্ষ্যঃ এক। মাতৃভূমিকে শত্রমুক্ত করা। দখলকারী বাহিনীকে পরাভূত করে মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষা হলো তাঁদের আদর্শ। সেই আদর্শে ব্ৰতী হয়ে লক্ষ লক্ষ কিশোর-যুবক অস্ত্র হাতে নিয়েছেন, শত্রর সংগে লড়াই করছেন। দেশের ভিতর থেকে সাধারণ মানুষ তাদের সমর্থন করছেন। দেশের ভিতরের মানুষের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা মুক্তিসেনাদের কাজে সুবিধে করে দিয়েছে অনেক। সেই সুবিধে আছে বলেই মুক্তিসেনারা খুব সহজেই শত্রদের কাবু করতে পারছেন। সারা বাংলায় শত্ররা আজ নাস্তনাবুদ, ঘায়েল হয়ে গেছে আক্রমণকারী বাহিনী। সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন বাংলার লক্ষ লক্ষ মুক্তিসেনারা তাঁদের সামরিক লক্ষ্যস্থল ঢাকার দিকে দূর্বার গতিতে অগ্রসর হবে- সে জন্য ব্যাপক প্রস্তত্ততি চলেছে সেই চলো চলো-ঢাকা চলো” অভিযান পরিচালনার জন্য। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তত। ঠিক এই যখন পরিস্থিতি তখন বিশ্বের নানা স্থান থেকে কুটনৈতিক চাপ পড়েছে সংশ্লিষ্টদের ওপরআপোষের জন্য। বিশ্বের বিভিন্ন সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন পথে চাপ দিচ্ছেন। পত্রান্তরে প্রকাশ, শুদু পাকিস্তানের ইয়াহিয়াকেই নয়, আপোষের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের উপর পরোক্ষ চাপ দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকেও চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু কিসের আপোষ? কার সংগে আপোষ? কেন সে আপোষ ? আমরা, সাড়ে সাত কোটি মানুষ-বাংলাদেশের অধিবাসী। আমরা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত ছিলাম। ২৩ বছরেও তা পাইনি। আর পেতে চাই না। আমরা এখন চাচ্ছি পুনর্দখল। স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হচ্ছে আমাদের মাতৃভূমি। আক্রমণকারী পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী হটকারিতা ও অস্ত্রের বলে আমাদের বেদখল দিয়েছে। আমরাও অস্ত্রের বলে দখল আদায় করবো। এই পথে কোন আপোষ নেই। রাশিয়া, আমেরিকা, বৃটেন, গণচীন, পশ্চিম জার্মানী ও যে কোন দেশই হোক না কেন-তারা যদি ইয়াহিয়াকে আপোষের পরামর্শ দিয়ে থাকে-দিক। আমরা তাতে সংশ্লিষ্ট নই। আমরা মাতৃভূমির মুক্তি সংগ্রামে লিপ্ত-মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমাদের সংগ্রামের ক্ষতি করে এমন কোন প্রস্তাব যাঁরা ভুট্টোকে পিকিং কি বলেছে জানি না, সুলতান মোহাম্মদকে উথান্ট কি বলেছে জানতে চাই না, মিসেস গান্ধীকে পশ্চিমা নেতারা কি বলেছেন-শুনতে রাজী নই। আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবো-আমরা, এ কথাটা সকলের অবগতির জন্য আমরা আবার পরিস্কার ভাষায় প্রকাশ করছি। কত বছর যুদ্ধ চলবে-সে হিসাব এখন করব না। শত্রদের বিতাড়িত করার পর সে হিসেব হবে-কতদিন লাগলো। বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন বলে “জনমত আশা করে।

  • জনমতঃ সাপ্তাহিক। প্রধান সম্পাদকঃ এ,টি,এম ওয়ালী আশরাফ। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ আনিস আহমদ, জনমত পালিশার্স লিমিটেড, ২ টেম্পারলে রোড, লন্ডন থেকে প্রকাশিত।