পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

619 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয়, সংগঠন ও সংগ্রামের ইতিহাস__‘বাংলাদেশপত্র টেক্সাসঃ ১ম সংখ্যা |_১৪ মে, ১৯৭১ ও কর্মসূচী স্বাধীনতার ডাকে বাংলাদেশে আজ রক্তগঙ্গা বইছে। বাঙালীরা রক্তে হোলী খেলে পাঞ্জাব দস্য দল পৈশাচিক আনন্দে মত্ত। আমাদেরই ভাইবোনেরা যখন অত্যাচারীর খড়গ রুখে দাঁড়াতে গিয়ে নির্বিচারে জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করছে না, তখন মার্কিনদেশের বিলাসময় পরিবেশের মধ্যে থেকে দেশের জন্য আমরা কি করছি? স্বাধীনতা আমরা পাবই, এ ব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। তবে, আন্দোলনে আমরা আমাদের দেশবাসীকে কতটুকুইবা সাহায্য করছি? ছিন্নবস্ত্রে, অনাহারে ও অন্নাভাবে থেকেও বাংলাদেশের বীর জনতা স্বৈরাচারী সাম্রাজ্যবাদের বেয়নেট শাসনকেও ভুলুষ্ঠিত করছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই সংকটময় মুহুর্তে দেশবাসী আমাদের কাছে অনেক কিছু আশা করে। আজ আমাদের সামান্য আত্মত্যাগের ভয়ে ভীত হলে চলবে না। কৈ আমরা এতটুকু আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিতে পেরেছি? হাজারো মানুষের রক্তের ঋণে গড়া এই সংগ্রামের ডাকে আমরা এককভাবে সাড়া দিতে না পারলে উত্তরসূরীরা আমাদেরকে ক্ষমা করবে না। তাই আজা আমাদের একতাবদ্ধ হতে হবে। আসুন বাংলা মায়ের ডাকে সবাই একসাথে কাজ করে যাই। দলাদলি ও বিভেদ ভুলে গিয়ে মাত্র একটি লক্ষ্যে পৌঁছাবার জন্য আমাদেরকে আত্মোৎসর্গ করতে হবে। করণীয় আমাদের অনেক। প্রচারকার্যে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র ও স্বাধিকার আদায়ে ংলাদেশের বীর জনতার মহান আদর্শ ও আত্মত্যাগের সংগ্রাম বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। প্রচারকার্য এবং বাংলাদেশের দুর্গত মানবতার জন্য আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন। এই মুহুর্তে আমাদের যথাসাধ্য সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। এই চরম সংকটকালে নির্বিকার হয়ে থাকলে চলবে না। বিনা ত্যাগে স্বাধীনতার আকাজক্ষা করলে ভুল হবে। এ ভুল-অমার্জনীয় অপরাধ। সংগ্রামহীন স্বাধীনতা লাভের নজীর ইতিহাসে নেই। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে গড়া এই মুক্তির সংগ্রামকে আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। বাংলার জয় হবেই। জয় বাংলা ॥ কলেজষ্টেশানঃ আমাদের কর্মসূচী গত নির্বাচনে অর্জিত গণতন্ত্রের অধিকার আদায়ের জন্য মার্চ মাসের প্রথম ভাগে শেখ মুজিবুর রহমান প্রদেশব্যাপী এক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনকে বানচাল করে দেবার জন্য পাঞ্জাবী সৈন্যরা নির্বিচারে গণহত্যা আরম্ভ করে। এই ঘটনার প্রথম থেকেই আমরা কলেজ ষ্টেশানের বাঙালী ছাত্ররা ক্যৈবদ্ধভাবে বাংলাদেশের জন্য কাজ শুরু করি। প্রথমতঃ একটি সামরিক পরিষদ গঠন করা হয়। তারপর আজ (চৌদ্দই মে) মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের তিনজন সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ সংগ্রামী ছাত্র সংস্থার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। এছাড়াও অনেকে বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে স্বেচ্ছায় কাজে এগিয়ে আসেন।

  • বাংলাদেশপত্রঃ বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা, কলেজষ্টেশন, শাখা কর্তৃক মুদ্রিত প্রকাশিত ও প্রচারিত।