পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

30 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম ংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয়ঃ জয় বাংলা ১৮ জুন, ১৯৭১ রাজনৈতিক সমাধান ১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা রাজনৈতিক সমাধান? বাংলাদেশ সমস্যার এক রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশ্বের বহু দেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর রূপ পাওয়া যাচ্ছে না বলে ‘রাজনৈতিক সমাধান এ অস্পষ্ট কথাটি অনেক কল্পনাজল্পনার জাল বুনে চলেছে। যে কোন সমাধানের পথে কল্পনা-কল্পনা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এবং সমস্যাটিকে জটিলতর করে। এ জন্যে সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট পথের একান্ত প্রয়োজন। যে কোন সমস্যার মত বাংলাদেশের সমস্যাকে বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণ না করে কেবল বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিচার করা হলে, আমরা মনে করি এর সমাধান পাওয়া যাবে না। কেন আজ বাঙ্গালী মরণপণ করে মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়েছে-এ কথাটির জবাব পেতে হবে। পৃথিবীর কাছে অজানা নয় যে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক এক রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে জয়ী হয়েও শান্তিপূর্ণ, সহ-অবস্থানের জন্য আলোচনা বৈঠকে মিলিত হয়েছি। সহিংস বিপ্লবী মত ও পথ আওয়ামী লীগের নয়। তবু কেন আজ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রাম চালাতে হচ্ছে এর সদুত্তর পেতে হবে। এ সংগ্রামের, এবং ইয়াহিয়া খান সরকারের পৈশাচিক বর্বরতার বহু কথা বলা হয়েছে, বহু বই লেখা হয়েছে। দুনিয়ার সকলের কাছে এ সব কথা জানা। মূল সমস্যার মৌলিক কারণগুলোকে এড়িয়ে কোন সমাধানের চেষ্টা করা হলে, সাময়িকভাবে স্বস্তি পাওয়া গেলেও স্থায়ী শান্তি আসতে পারে না। স্থায়ী সমাধাণের জন্যে নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত মন, গভীর ও সুদূরপ্রসার অন্তদৃষ্টি এবং বাস্তব উপলব্ধির প্রয়োজন। তাই, যারা রাজনৈতিক সমাধানের ধুয়া তুলেছেন তাঁদের কাছে সংগ্রামের সার্বিক রূপটি স্পষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন শেষে স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিল, গণতন্ত্রের সাধারণ নিয়মে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে, আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংবিধান রচনা করবে, পাকিস্তানের শাসন, ভার, পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত চালিয়ে যাবে। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকে পাকিস্তানে যে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলে আসছে তারই পথ ধরে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে কায়েমী স্বার্থবাদী, অগণতান্ত্রিক শক্তি আবারও চক্রান্ত শুরু করল। মানুষের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করে দিয়ে শাসন ও শোষণকে অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে তারা আকস্মিকভাবে নিরাপরাধ, নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য লেলিয়ে দিল। তারা বাংলাদেশকে লক্ষ মা বোনদের ইজ্জতহানি করেছে, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি লুট করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক চক্রের নজিরবিহীন নির্মমতা ও পাশবিকতা, সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মনকে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। বাঙ্গালীর চোখে আজ তীব্র ঘৃণা ও প্রতিহিংসার আগুন জুলছে। গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের কষ্ঠে যেদিন ধ্বনিত হল-“লক্ষ লক্ষ শহীদের লাশের উপর আলোচনা চলতে পারে না’-সেদিন ক্ষতবিক্ষত বাঙ্গালীর মনের কথাটিই প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠেছিল।