পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

33 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালী আজ জয় বাংলা ১৮ জুন, ১৯৭১ সাম্প্রদায়িক মনোভাবের উর্ধ্বে ১ম বর্ষঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা ঐক্যবদ্ধ বাঙালী আজ সাম্প্রদায়িক মনোভাবের উর্ধ্বে পৃথিবীর সভ্য মানুষ মাত্রই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বা একই রাষ্ট্রের মধ্যকার ধর্ম সম্প্রদায়ের হানাহানিকে ঘৃণা করে। এই সাম্প্রদায়িকতা ক্ষয়িঞ্চ শাসকচক্রের আত্মরক্ষার কবচস্বরূপ। বর্তমান পাকিস্তান সরকারও নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে বাংলাদেশকে শাসনের হাতিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছে। এখন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার যে বিষ পাকিস্তান সরকার ছড়াচ্ছে তার পশ্চাতে আছে শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তান সরকারের অনেক কৌশল, অনেক চক্রান্ত এবং অনেক স্বার্থের দ্বন্দ্ব। একনায়ক শাসন ব্যবস্থায় শাসক শ্রেণী শাসন ও শোষণ যন্ত্রকে অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাস, দ্বিধা-সন্দেহ সৃষ্টি করে পরিণামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেয়। পাকিস্তানে যতবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেঁধেছে ততবারই তার মূলে পশ্চিম পাকিস্তান শাসক শ্রেণীর চক্রান্ত ক্রিয়াশীল ছিল। উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল সমস্যা থেকে বাঙ্গালীদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেয়া ও বাঙ্গালী জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠা ব্যাহত করা। ফলে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক বাংলার শোষণ সহজতর হবে। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকচক্র বরাবরই চেয়েছে পূর্ববাংলার জনগণ যেন একতাবদ্ধ না হতে পারে। কারণ পূর্ববাংলার হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান-ধৃষ্টান যদি একতাবদ্ধ হয় হবে তাকে কিছুতেই পশ্চিম পাকিস্তান রুখতে পারবে না। এ জন্যেও সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে তার এত উৎসাহ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই পূর্ববাংলার মানুষ ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মতামত গড়ে তোলে; এই অভিজ্ঞানের পর থেকে সাধারণ মনোভঙ্গী গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৫৪ সালে জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর প্রচেষ্টায় যুক্ত নির্বাচন প্রথা প্রবর্তন ও বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রভাবে সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত সৃষ্টির সমাধি রচনা হলো। আজ যাঁরা স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরোভাগে তাদের দ্বারা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবং স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল সেদিনই। আর এই ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক সংগ্রাম চালাতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর বিভিন্ন নির্যাতনমূলক আইনের মাধ্যমে জেল ও নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের প্রধান সহচর পূর্ববাংলার তদানীন্তন গভর্নর মোনয়েম খান পুনরায় এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেন। শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবর্গ বাংলাদেশের সর্বত্র দাঙ্গাবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানালেন। এই সময় ঢাকার সকল পত্রিকায় ‘পূর্ব বাং রুখিয়া দাঁড়াও শিরোনামায় বাঙালীর প্রতি এক আকুল আবেদন করা হয়। সেই আহবানে এক অপার মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমস্ত চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি সাড়া দিল। দাঙ্গা রোধ করতে গিয়ে সেদিন আমির হোসেন চৌধুরীর মত বহু মুসলমান অকাতরে মৃত্যুবরণ করে নিল। কথায় ফানুস দিয়ে নয়, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাঙালী এবারও তাঁর মানবতাপ্রীতি প্রমাণ করলো। তারপর থেকে শাসক শ্রেণী চেষ্টা করতে লাগলো বাঙালী অবাঙালী দাঙ্গা বাধিয়ে তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সে ঘৃণ্য চেষ্টাও ব্যর্থ করে দিয়ে তাদের নিরাশ করলো। বর্তমান সংগ্রামের এক পর্যায়ে আবার পশ্চিমী শাসকচক্র সাম্পদায়িকতার ধুয়া তুললো। পাকিস্তানী বেতার যন্ত্র হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারে তৎপর হয়ে উঠলো। এই পর্যায়ে ইয়াহিয়ার জঙ্গীচক্র সুপরিকল্পিতভাবে বেশ কিছু হিন্দু অধুষিত গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে অসহায় জনগণকে ঘর