পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

45 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ ঐতিহাসিক গণপ্রতিনিধি জয় বাংলা ৩০ জুলাই, ১৯৭১ সমাবেশ ১ম বর্ষঃ ১২শ সংখ্যা ঐতিহাসিক গণপ্রতিনিধি সমাবেশ আহমদ রফিক অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতায় উত্তরণ করে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করার পর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রথম বৈঠক এ মাসেই ৫ই ও ৬ই তারিখে মুজিবনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে যখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ী সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে বুকের তাজা রক্ত বইয়ে দিয়েছে বাংলার শ্যামল প্রান্তরে, জাতীয়তাবাদের নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও স্বাধীনতা মন্ত্রে দীক্ষিত সংগ্রামী বাংলার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারারুদ্ধ, বিশ্বমানবতা যখন বিবেকের দংশনে কিংকর্তব্য বিমূঢ়, সারা বিশ্ব যখন বাংলার নেতৃত্ব বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দিকে এক বিরাট উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে আছে, তেমনি এক মুহুর্তে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল। কার্যকরী সংসদের ৩৯ জন সদস্য এবং উভয় পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের যুক্ত বৈঠকে মোট ৩৭৪ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১৩৫ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য ২৩৯ জন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের মধ্যে যাঁরা সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনীর হাতে নিহত অথবা গ্রেফতার হয়েছেন এবং কয়েকজন আত্মসমর্পণও করেছেন। পারেননি। অবশ্য আরও বেশ কয়েকজন সদস্য পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহে আশ্রয় নিয়েছেন। এই বৈঠক কয়েকটি দিক থেকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইয়াহিয়া সরকার আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশের মক্তি সংগ্রামকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়েছিল। ইয়াহিয়া সরকার আওয়ামী লীগকে বেআইনী ঘোষণা করে, আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও নির্বাচিত পরিষদ সদস্যদের উপর সকল রকম অত্যাচার চালিয়ে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করেছে। আর সর্বশেষে আওয়ামী লীগকে বেআইনী ঘোষণা করা হলেও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাচন বাতিল হবে না বলে একটি মস্ত বড় প্রলোভনের টোপ ছেড়েলিল। কিন্তু এই বৈঠক প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ইয়াহিয়ার প্রলোভনের টোপ ব্যর্থ হয়েছে। সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিটি মানুষই যে সংগ্রামী বাংলাদেশের প্রতিনিধি তার চিহ্ন আঁকা রয়েছে তাদের চোখে মুখে। তাঁরা এসেছেন রণক্ষেত্রের মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সার বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের দুর্জয় সংকল্পের প্রতিনিধি হিসেবে। তাদের চোখ মুখে চূড়ান্ত বিজয়ের আলোর উদ্ভাসিত। এই বৈঠকের রাজনৈতিক তাৎপর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্বও অনেক ভাবী কালের ঐতিহাসিকেরা যেদিন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের গৌরবোজ্জল ইতিহাস লিখবেন, সেদিন এই মুজিবনগর বৈঠকের গুরুত্ব তার যথার্থ প্রেক্ষিত নিয়ে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কেউ কেউ হয়ত বলতে পারেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা একটি যুক্ত বৈঠক করেছেন এবং দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকতে পারে, ঐতিহাসিক তাৎপর্য কি?