পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

51 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড কোটি টাকার শস্য নষ্ট, জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হওয়ার পরও এই সমস্যার যে সমাধান হয়নি, তার কারণ বাংলাদেশের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গী চক্রের ঔপনিবেশিক শাসন। বাংলাদেশ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শকুনী চরিত্রের একদল মানবতাদ্রোহী শাসকের ও শোষণের লীলাক্ষেত্র। পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক্তন কর্তা এবং এখন যিনি জেনারেল ইয়াহিয়ার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, সেই পাঞ্জাবী আমলা এম এম আহমদ এ যুগের শ্রেষ্ঠ প্রতারক ও জালিয়াত আখ্যালাভের যোগ্য। বাংলাদেশের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় পশ্চিম পাকিস্তানের তারবেলা, মংলা বাধ পরিকল্পনা কার্যকরী হয়েছে পরিকল্পনা বহির্ভূত টাকায় জমির লবণাক্ততার সমস্যা মোচন করা সম্ভব হয়েছে, এমনকি বিনা প্রয়োজনে কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যায় পাঞ্জাবের মরুভূমিতে ইসলামাবাদ নাম দিয়ে একটি নতুন রাজধনী তৈরী করা সম্ভব হয়েছে। কেবল সম্ভব হয়নি ১৯৫৫ সালের পর বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁচশো কোটি টাকার একটি প্রাথমিক পরিকল্পনার অর্থসংস্থান করা, বাংলাদেশের একমাত্র প্রস্তাবিত আনবিক চুল্লী রূপপুর কেন্দ্রের জন্য বৈদেশিক সাহায্য সংগ্রহ করা। বছরের পর বছর পরাধীনতার যে মর্মজ্বালা বাঙালীরা হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছে, তারই বহিঃপ্রকাশ আজকের মুক্তি সংগ্রাম। এবারেও বাংলাদেশেও দখলীকৃত বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার ঢল নেমেছে এবং বিভিন্ন নদীতে পানির উচচতা বিপদসীমার দিকে দ্রুত এগিয়ে গেছে। কিন্তু এবারের বন্যা বাঙালীদের জন্য যতই দুঃখ কষ্টের হোক, তার মধ্যে আশীর্বাদের অংশও কম নয়। বন্যার ফলে হানাদার বাহিনীর চলাচল এখন রুদ্ধ। তাদের ট্যাঙ্ক ও বিমান অকেজো হয়ে পড়েছে। দখলীকৃত এলাকায় বাঙালী মুক্তিবাহিনী এই সুযোগে আগের চাইতেও তৎপর হয়েছেন। এই তৎপরতা আরো বাড়ানো হবে। শত্রর উপর চূড়ান্ত আঘাত হানার সন্ধিক্ষণ দ্রুত এগিয়ে আসছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের বন্যা সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের মানুষের সকল দুঃখকষ্টের অবসানের একমাত্র উপায় তার স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাকে তুরান্বিত করাই আমাদের আজিকার একমাত্র কর্তব্য।