পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

56 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড কাছে মানবতা বা মানবাধিকারের বানী অর্থহীন শব্দ মাত্র । অথচ এই হানাদার সামরিক জান্তাই বিশ্বের কাছে দখলীকৃত এলাকার দুর্গত মানুষের ত্রাণ কার্যের জন্য সাহায্য চেয়ে পাঠাচ্ছে। আসলে তা বাঙালীদের ত্রাণ কার্যের জন্যে নয়, তাদের ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিকে কোন রকমে টিকিয়ে রাখার এবং ঘাতক সৈন্যদের জন্যে রসদের সরবরাহ অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যেই এই সাহায্যের আবেদন জানানো হচ্ছে। তা নইলে অপারেশন ওমেগার সদস্যদের সাহায্য সম্ভার দুস্থ মানুষদের মধ্যে বিতরণ করতে না দেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। যাঁরা সত্য-সত্যই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান কামনা করেন, তাঁরা এটাও জানেন যে, একমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃত্বের সঙ্গেই রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব। তাঁরা এও জানেন যে, পচিশে মার্চের রাতেই ইয়াহিয়ার সামরিক চক্র সেই সমাধানের সকল পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। শুধু মুখের কথায় একটা সামরিক জান্তাকে রাজনৈতিক সমাধানের পথে আনা সম্ভব নয়, তাদের রাজনৈতিক সমাধানের পথে আসতে বাধ্য করতে হবে। ভাল কথায় তাদের মনে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে না। সিনেটর কেনেডি নিজেই বলেছেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অবস্থায় প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীরা কিছুতেই স্বদেশে ফিরতে প্রস্তত নয়, এ কথাটা তিনি উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছেন। তাহলে এই সমস্যার সমাধান যে কি তাও তিনি নিজে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, এই সমাধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে করতে হবে। পূর্ব জার্মানীর প্রতিনিধিদলও বলেছেন যে, রাজনৈতিক সমাধান সেখানকার জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী হতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচন, আশি লক্ষ শরণার্থীর প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ ও আরও সমপরিমাণ শরণার্থীর আগমন সম্ভাবনা এবং গণপ্রতিনিধিদের অভিতম থেকে জনগণের ইছা যে কি তা বুঝতে কারও অসুবিধা হবার কথা হয়। আরও অস্ত্ৰ শস্ত্র ও রসদ দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে তাদের ঘাতক বৃত্তিতে উৎসাহ দান করলে কোন ক্রমেই বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী রাজনৈতিক সমাধান করা যাবে না। সাহায্যদান বন্ধ করতে হবে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হানাদার বাহিনীকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্বজ্ঞানহীন ও নৈতিকতা বিরোধী এককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারী অব ষ্টেট ও ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদুত মিঃ চেষ্টার বোলস মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন যে, পাকিস্তানে অব্যাহত মার্কিন সাহায্য দাবিত্বজ্ঞানহীন ও নীতিবিগর্হিত। ভ্রান্ত মার্কিন নীতি সংশোধন করে তিনি সামরিক সাহায্যদানের পরিবর্তে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনায় প্রবৃত্ত হবার জন্যে ইয়াহিয়ার উপর চাপ সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছেন। সিনেটর কেনেডির রাজনৈতিক সমাধানের রূপরেখা আমাদের জানা নেই। কিন্তু প্রকৃত পরিস্থিতি তিনি নিজেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর রাজনৈতিক সমাধানের ফর্মুলা উদ্ভাবন করতে হবে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে এই সমাধানের যে সম্ভাবনা ২৫শে মার্চের পূর্বে ছিল, ২৫শে মার্চের মধ্য রাতেই সে সম্ভাবনাকে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের ন্যাপ নেতা ওয়ালী খানও সম্প্রতি কাবুলে এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে এই সত্য স্বীকার করেছেন।