পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

103 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড করেননি তাদের মধ্যেও কিছু সংখ্যক সদস্যকে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং তাদের আসন বহাল রাখতে দেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট বলেন যে, সীমান্ত এলাকা ব্যতীত পূর্ব-পাকিস্তানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। সীমান্তের অপর পার থেকে উক্ত এলাকাগুলোতে গোলযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন যে, সীমান্তে বরাবর দিনরাত প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে এবং এই সংঘর্ষের পরিণামে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। তিনি বলেন যে, সীমান্ত বরাবর গোলযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। উপ প্রেসিডেন্ট সুস্পষ্ট ভাষায় জানান যে, পাকিস্তান যুদ্ধ চায় না। তিনি বলেন, যুদ্ধ সমস্যাদির সমাধান করতে পারে না। যুদ্ধে কেবল বিপুল ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয় এবং মানুষের জীবনযাত্রা ও যুদ্ধরত রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি ব্যাহত হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন, তিনি একাধিকবার ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ভারতের সঙ্গে যে কোন পর্যায়ে আলোচনা করতে রাজী আছেন। কিন্তু তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন যে, ভারত এ ব্যাপারে কোন সাড়া দেয়নি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন যে, পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধের খুবই কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু তিনি যথেষ্ট ধৈর্যের সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন যে, এর চাইতেও অনেক কম গুরুতর পরিস্থিতি পৃথিবীতে যুদ্ধের কারণ হয়েছে। তিনি বলেন যে, পাক-ভারত উপমহাদেশে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা অত্যন্ত পরিবর্তনশীল, বিস্ফোরন্মুখ ও বিপদজ্জনক। তিনি বলেন, আমার সরকার ও আমি অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি, মূলতঃ সে কারণে আমরা এখনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়িনি। প্রেসিডেন্ট এটা সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে কোনরুপ তৎপরতার মাধ্যমে যদি পাকিস্তানের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে যুদ্ধ হবে। বাস্তুচু্যত ব্যক্তিদের সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াহিয়া বলেন যে, যাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছে, তাদের বাড়ীঘরে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পাকিস্তান বিশেষভাবে আগ্রহী। তিনি বলেন যে, বাস্তুত্যাগীদের সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তাদের ফিরে আসার সুযোগসুবিধা দেওয়ার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় অনেকগুলো অভ্যর্থনা শিবির খোলা হয়েছে। তিনি বলেন যে, বাস্তুচু্যতদের পুনর্বাসনে জন্য জাতিসংঘের সাহায্যকে পাকিস্তান স্বাগত জানিয়েছে এবং জাতিসঙ্ঘের সেক্রেটারী জেনারেল উ থান্টের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, বাস্তুচু্যতদের সাহায্য করার জন্য পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাই কমিশনের পর্যবেক্ষকদের গ্রহণ করতে রাজী হয়েছে, কিন্তু অপর পক্ষের এই প্রস্তাব গ্রহণের উপরই তার বাস্তবায়ন নির্ভর করছে। প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন করেন যখন সশস্ত্র অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে এবং যখন বাস্তচু্যতদের চারপাশে ফিল্ডগান ও মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ চলছে তখন বাস্তুচ্যুতরা কিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ফিরে আসতে পারে?