পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

385 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড হবে এবং তাতে পাকিস্তানের সংহতি কিংবা ইসলাম বিপন্ন হবে না।” ১৯৭০ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর তিনি নির্বাচনকে “প্রদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে এশটি গণভোট” বলে অভিহিত করেন। ৬ই নভেম্বর ১৯৭০ সিলেটে আরেক ভাষণে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের ৬-দফা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে কেবল আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসের মাধ্যমে শাসনতন্ত্রে পূর্ববঙ্গের স্বার্থরক্ষার নিশ্চয়তাবিধান করা।” আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও একই ধরনের কথা বলেন। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ১৯৭০ সালের ২১শে সেপ্টেম্বও নারায়ণগঞ্জে বলেন যে, “৬-দফা আদায়ের প্রশ্নটি অখণ্ডতা ও সংহতির সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত”। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব এ, এইচ, এম, কামরুজ্জামান ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লাহোরে এক জনসভায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তানকে খণ্ড-বিখণ্ড করা তাঁর দলের উদ্দেশ্য নয়। এর আগে ১৯৭০ সালের ২১শে জুন রাজশাহীতে এক জনসভায় বক্তৃতাদানকালে তিনি বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার মুশতাক আহমদ ১৯৭০ সালের ২০শে মার্চ ফেনীতে এক জনসভায় বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হচ্ছে একটি শক্তিশালী পাকিস্তান গঠন করা। তিনি বলেন, পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন একটি শক্তিশালী জাতি গঠন সহায়ক হবে। যাহোক, শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহযোগীদের এসব বক্তৃতার মধ্যে এমন সব কথা ছিল বা অত্যন্ত আবেগপ্রসূত এবং তথ্যের দিক দিয়ে ক্রটিপূর্ণ যার উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানীদেরকে তাদের পশ্চিম পাকিস্তান ভাইদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলা। ১৯৭০ সালের ১১ই মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের হাজারীবাগ পার্কে এক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান নওয়ারজাদা নসরুল্লাহ খান, মওলানা মওদুদী, খান আবদুল কাইয়ুম খান প্রমুখের কাছে জানতে চান যে তাঁরা তাঁদের প্রভুদের মাধ্যমে বাংলার যে সম্পদ লুণ্ঠন করেছেন তা ফিরিয়ে দিতে আর কত সময় নিবেন। তিনি বাঙালীদেরকে এই মাহেন্দ্রক্ষণে ওার এবং বাংলার পবিত্র মাটি থেকে রাজনৈতিক মীরজাফর এবং পরগাছাদের নির্মুল করার আহবান জানান। ১৯৭০ সালের ১০ই মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ঢাকায় এক জনসভায় বলেন, “বিগত বৎসরগুলোতে শোষক এবং ডাকাতরা বাঙালীদের রক্ত মাংস চিবিয়ে খেয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক গগন থেকে তাদেরকে বিদায় করতে হবে।” পাকিস্তানের এক শ্রেণীর শোষণকারী পূর্ব বাংলাকে গত ২৩ বছর ধরে শোষণ করেছে। পাকিস্তানের ইতিহাস একটি ষড়যন্ত্রের ইতিহাস, অব্যাহত নির্যাতন ও শোষণের ইতিহাস।” এরপর পূর্ব পাকিস্তানে যে নির্বাচনী অভিযান শুরু হয় তাতে আওয়ামী লীগ এমন অসংযমের পরিচয় দেয় যে তার বিরুদ্ধে অন্যান্য সব দল অভিযোগমুখর হয়ে উঠে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অভিযানের বিরুদ্ধে যারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানান তাঁদের মধ্যে রয়েছেনঃ (১) জনাব নূরুল আমীন-পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সভাপতি এবং পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্য জার। (২) জনাব আবদুস সালাম-পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি। (৩) জনাব মাহমুদ আলী- পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শাখার সহ-সভাপতি। (৪) প্রফেসর গোলাম আযম- পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর। (৫) সৈয়দ আলতাফ হোসেন- পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ওয়ালী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক।