পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

390 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার সাথে পরিষ্কারভাবে আশ্বাসও দেওয়া হলো যে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আমাদের চরম লক্ষ্য- আর তা সবকিছুর উর্ধ্বে। শেখ মুজিবুর রহমান এর জবাব দিলেন সাধারণ ধর্মঘট আহবান করে। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চের বিবৃতিতে তিনি বলেন- “এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকারী কর্মচারীসহ, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঙালীর পবিত্র কর্তব্য হচ্ছে- গণবিরোধী শক্তির সঙ্গে সহযোগিতা না করা। অধিকন্তু তাদের উচিত সবটুকু শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেওয়া।” আওয়ামী লীগের ধর্মঘটের আহবান ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযান সারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক জীবনকে পঙ্গু করে দিলো। আইন ও শৃঙ্খলার দ্রুত অবনতি ঘটতে লাগলো। (এসব ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই শ্বেতপত্রের তৃতীয় অধ্যায়ে পাওয়া যাবে)। শাসনতান্ত্রিক সঙ্কটের সমাধান করার উদ্দেশ্যে, ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ- প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদের পার্লামেন্টারী গ্রুপের ১২ জন নির্বাচিত সদস্যকে ১৯৭১ সালের ১০ই মার্চ ঢাকায় মিলিত হবার আমন্ত্রণ জানালেন। সে সম্মেলনে যে সব নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো তাঁরা হচ্ছেনঃ ১. শেখ মুজিবুর রহমান (আওয়ামী লীগ)। ২. জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো (পাকিস্তান পিপলস পার্টি)। ৩. খান আবদুল কাইয়ুম খান (পাকিস্তান মুসলিম লীগ)। ৪. জনাব নূরুল আমীন (পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি)। ৫. মিয়া মমতাজ দৌলতানা (কাউন্সিল মুসলিম লীগ)। ৬. খান আবদুল ওয়ালী খান (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি)। ৭. মওলানা মুফতী মাহমদ (জামিয়াত-উল-উলামা-ইসলাম)। ৮. মওলানা শাহ আহমদ নুরানী (জামিয়াত-উল-উলামা-ই-পাকিস্তান)। ৯. জনাব আবদুল গফুর আহমদ (জামাত-ই-ইসলামী)। ১০. জনাব মোহাম্মদ জামাল কোরেজা (পাকিস্তান মুসলিম লীগ- কনভেনশন)। ১১. মেজর জেনারেল জামাল দার সীমান্ত এলাকার। ১২. মালিক জাহাঙ্গীর খান প্রতিনিধি। প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণায় আরো বলা হয়- “সম্মেলনের পর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে বসা কেন যে সম্ভব হবে না প্রেসিডেন্ট তার কারণ দেখছেন না।” শেখ মুজিবুর রহমান একই দিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের কথা ঘোষণা করেন। সারা পূর্ব পাকিস্তানে অরাজকতা বৃদ্ধি এবং জান-মালের বিপুল ক্ষতি সাধিত হতে থাকে। শেখ মুজিবুর রহমান “সহিংস অসহযোগ আন্দোলন” সাফল্যমণ্ডিত করার জন্যে বিভিন্ন নির্দেশ জারী করা শুরু করেন। তিনি খাজনা-বন্ধ অভিযানের কথাও ঘোষণা করেন।