পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

394 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড সেইদিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের একটি টীম প্রেসিডেন্টের সাহায্যকারীদের সংগে সাক্ষাৎ করলেন। আওয়ামী লীগের এই টমে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জনাব তাজউদ্দিন আহমদ ও ডক্টর কামাল হোসেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের পদ্ধতি এই বৈঠকে আলোচিত হলো। এতে একটি সামরিক আইন বিধির খসড়া প্রস্তুত করা হলো। এই আইন বিধিতে ব্যবস্থা করা হলো যে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে সদস্য বাছাই করে একটি উজীর-সভা গঠিত হবে। এই উজীর-সভা প্রাদেশিক গভর্নরকে তাঁর কর্তব্যপালনে সাহায্য করবেন এবং পরামর্শ দেবেন। এই সামরিক আইন বিধিতে এমন ব্যবস্থাও রাখা হলো যে সামরিক আইন কার্যকারী থাকবে অন্তরাল থেকে। এই সময়ে ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক একটি আদেশ জারী করলেন। এই আদেশ বলে একটি তদন্ত কমিশন নিয়োগ করা হলো। ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ তারিখে কোন পরিস্থিতিতে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সাহায্যের জন্য সৈন্যবাহিনী তলব করা হয়েছিলো- সে সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য এই কমিশন নিয়োগ করা হলো। শেখ মুজিবের ৪ দফা দাবীর অন্তর্গত তৃতীয় দফার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। সামরিক আইন বিধিতে ব্যবস্থা করা হলো যে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত একজন বিচারপতি এই কমিশনের প্রধান হবেন। এতে ৪ জন সদস্য থাকবেন। এই ৪ জন সদস্য নেওয়া হবে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস, পাকিস্তান পুলিশ সার্ভিস, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল বাহিনী থেকে। ১৮ই মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিব তদন্ত কমিশন প্রত্যাখ্যান করে একটি বিবৃতি দিলেন। এই তদন্ত কমিশন ছিলো তাঁর ৭ই মার্চের ৪ দফা দাবীর তৃতীয় দফা। শেখ মুজিব বললেনঃ “আমরা এ ধরনের একটি কমিশনকে গ্রহণ করতে পারি না। বাংলাদেশের লোকেরা এমন একটি কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করবে না এবং এর সদস্যও হবে না।” তিনি আরও বললেনঃ “একটি সামরিক আইনবিধির অধীনে এই কমিশনের নিয়োগ, এবং সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট কমিশনের রিপোর্ট পেশ করার বিধান- দুটােই আপত্তিজনক।” ১৯শে মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিবুর রহমান বেলা ১১টায় প্রেসিডেন্টের সংগে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি পীড়াপীড়ি করলেন যে খসড়া সামরিক আইন বিধি চালু থাকাকালীন অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকতে হবে এবং কেন্দ্র ও প্রদেশে থাকবে এক একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার। তিনি সামরিক আইন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করারও দাবী জানালেন। সেইদিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ও শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারীদের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। আওয়ামী লীগ টীমকে জানানো হলো যে ১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চের সামরিক আইন ঘোষণা যতি বাতিল করা হয় তাহলে যে দলিলের বলে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার কোন আইনগত বৈধতা থাকবে না। সুতরাং দেশে সৃষ্টি হবে একটি শাসনতান্ত্রিক শূন্যতা। একথাও ব্যাখ্যা করা হলো যে জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান প্রধান সামরিক শাসনকর্তার অধিকার বলেই প্রেসিডেন্টের পদেও অধিষ্ঠিত রয়েছেন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বললেন যে এগুলো রাজনৈতিক বিষয় এবং “রাজনৈতিক পদ্ধতিতেই” এগুলোর সামাধান হওয়া উচিত। ডক্টর কামাল হোসেন প্রস্তাব দিলেন যে জেনারেল এ এম, ইয়াহিয়া খান প্রধান সামরিক শাসনকর্তার ক্ষমতাবলী ত্যাগ করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের পদবী ও ক্ষমতাবলী গ্রহণ করতে পারেন। এই বৈঠকের পর, আওয়ামী লীগের দাবী আইনগতভাবে যথাসম্ভব পূরণের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্টের টীম অন্য একটি সামরিক আইন বিধির খসড়া প্রণয়ন করলেন। এই সামরিক আইন বিধিতে নিম্নলিখিত বিধানগুলো ছিলোঃ