পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

407 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ৭ই মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিবুর রহমান একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার চালাবার কথা ঘোষণা করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকটি নির্দেশ জারী করেন। অহিংস এবং অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্য তিনি সপ্তাহব্যাপী এক কার্যসূচী প্রকাশ করেন। (যেটা ২রা মার্চ শুরু হয়েছিলো।) কাৰ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিলো (১) কর না দেওয়া আন্দোলন (২) সারা “বাংলাদেশের” শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, সরকারী ও আধা সরকারী অফিসগুলো, হাইকোর্ট এবং অন্যান্য কোর্ট বন্ধ করে দেওয়া। রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রসমূহকে আওয়ামী লীগের কর্মপন্থা অনুযায়ী নির্দেশ দেওয়া হলো এবং এও জানানো হলো যে, এ নির্দেশ অমান্য করলে মনে করা হবে যে এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত বাঙালীরা সহযোগিতা করছে না। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে টেলিযোগাযোগ বন্ধ করা হলো। এক নির্দেশে বলা হলো “ষ্টেট ব্যাংক বা অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে ব্যাংক পশ্চিম পাকিস্তানে টাকা-পয়সা পাঠাতে পারবে না।” আর এক নির্দেশে বিশেষ করে উল্লেখ করা হলো যে প্রত্যেক ইউনিয়ন, মহল্লা, থানা, মহকুমা এবং জেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ইউনিটের নেতৃত্বে একটা করে সংগ্রাম পরিষদ সংগঠন করা হবে। ঢাকায় রেডিও পাকিস্তান ভবনের মধ্যে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পাওয়া যায় যে আওয়ামী লীগ ছাত্রদলরা জোর করে জীপ, পিকআপ এবং মাইক্রোবাস নিয়ে যাচ্ছে। ৮ই মার্চ, ১৯৭১ ঢাকায় যাদের লাইসেন্স রয়েছে তাদের কাছ থেকে জোর-জবরদস্তি করে আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবীরা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাগুলী সংগ্রহ করতে লাগলো। পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য শহর থেকেও অনুরূপ ঘটনার খবর পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগ সারা প্রদেশ জুড়ে মিটিং এবং উন্মুক্ত মিছিলের ব্যবস্থা করলো জাতীয়বাদ এবং পাকিস্তানবিরোধী শ্লোগান ছিলো তাদের মুখে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব তাজুদ্দীন আহমদ “শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশের কতকগুলি ব্যতিক্রম ব্যাখ্যা ও ঘোষণা করলেন। এর মধ্যে ছিল “ষ্টেট ব্যাংক বা অন্য কোনভাবে বাংলাদেশের বাইরে টাকা পাঠানো যাবে না।” ৯ই মার্চ, ১৯৭১ বাংলাদেশের বাইরে যাতে ধনসম্পদ না যায়, সে জন্য আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবীরা এবং ছাত্রদল ঢাকার বিভিন্ন অংশে তল্লাশী ফাঁড়ি বসালো তল্লাশী করার অজুহাতে এসব স্বেচ্ছাসেবীরা যাদের তল্লশী করলো তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বাংলাদেশের নামে হস্তগত করলো। রংপুরের লালমনিরহাটে এক উন্মুক্ত জনতা একটি ট্রেন থামিয়ে তার অনেক ক্ষতি করে। জাতিগত এবং রাজনৈতিক কারণে ট্রেনের কিছু যাত্রীদের হয়রানি এবং মারপিট করে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় অধিবাসীদের আওয়ামী লীগ কর্মীরা আক্রমণও করেছিলো। রাজশাহীতে নিটি টাউন হলে একটা ‘স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলন করা হয়।