410 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ১৭ই মার্চ, ১৯৭১ ১৬ ও ১৭ই মার্চের মধ্যবর্তী রাতে ঢাকার আজিমপুরায় একটি সরকারী অফিসের উপর দুইটি এসিড বোতল নিক্ষেপ করা হয়। ঢাকায় মতিঝিল কেন্দ্রীয় সরকারী হাইস্কুলের উপর হামলা চালানো হয় এবং এসিড ও রাসায়নিক দ্রব্য লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৮ই মার্চ, ১৯৭১ যশোরে সেনাবাহিনীর একটি শিবিরে দুজন সামরিক কর্মচারীর উপর এসিডের বোতল নিক্ষেপ করা হয়। ১৯ ই মার্চ, ১৯৭১ ঢাকায় একটি লেভেল ক্রসিংয়ের উপর ময়মনসিংহ থেকে প্রত্যাবর্তনকারী একটি সামরিক যানের উপর এক জনতা অতর্কিত আক্রমণ চালায়। আক্রমণকারীরা অস্ত্রশস্ত্রসহ ৬ জন লোককে নিয়ে পালিয়ে যায়। যশোরে বিজলী কেন্দ্রের ক্ষতিসাধন করে বিজলী সরবরাহ ব্যাহত করে দেয়া হয়। যশোর-খুলনা সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হয়। খুলনায় ৫ই মার্চের হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া প্রায় ৩শ লোকের উপর নতুন করে হামলা চালানোর হুমকি দেয়া হয়। রংপুরে ছাত্ররা কালিগঞ্জ থানার লালবাড়ী গ্রামে ১২টি বাড়ী পুড়িয়ে দেয়। ঢাকা থেকে ২২ মাইল দূরে জয়দেবপুর বাজারে লেভেল ক্রসিংয়ের উপর একটি ট্রেন রেখে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হলে জনতা এবং সেনাবাহিনীর লোকদের মধ্যে গোলাগুলি বিনিময় হয়। এরপর সেখানে সান্ধ্য আইন জারী করা হয়। সৈন্যরা ট্রেনটি একদিকে সরিয়ে দিয়ে তাদের যাওয়ার পথ করার চেষ্টা করলে জনতা তাদের উপর গুলি চালায়। এতে তিনজন সৈন্য মারাত্মকভাবে জখম হয়। সৈন্যরা পাল্টা গুলি চালালে দুজন লোক নিহত এবং অন্য ৫ জন আহত হয়। জয়দেবপুর চৌমাথায় উন্মুক্ত জনতা আবার সৈন্যদের উপর গুলি বর্ষণ করলে একজন সৈন্য নিহত হয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে আরো আধাডজন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়। ২০ ও ২১শে মার্চ, ১৯৭১ যশোরে, হিন্দুস্তান থেকে সাতক্ষীরা হয়ে বিপুল পরিমাণ হিন্দুস্তানী অস্ত্রশস্ত্র চোরাপথে সীমান্তের এপারে আসে বলে খবর পাওয়া যায়। চোরাপথে আনীত অস্ত্রশস্ত্র চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা পাঠানো হয় বলেও খবর পাওয়া যায়। হংকং-এর দি ফার ইষ্টার্ন রিভিউ ২০শে মার্চ (১৯৭১ সাল) সংখ্যায় লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর পরবর্তী উদ্বেগের কথা ভাবছিলেন, তখন শেখ মুজিবুর রহমান তার ঢাকার বাড়ীতে আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, এটাই শেষ দফা। শেখ মুজিবুরের বাসভবন বাংলাদেশের পতাকা এবং বিভিন্ন প্রতীক দিয়ে সুসজ্জিত ছিল। এ কথার অর্থ কি তা জিজ্ঞাসা করায় তিনি সেই শ্লোগানটি দিয়ে তার জবাব দিলেন, যা তিনি হাজার বার জনতার সামনে উচ্চারণ করেছেন- “জয় স্বাধীন বাংলা, স্বাধীন বাংলা দীর্ঘজীবী হোক।” ২২শে মার্চ, ১৯৭১ দিনাজপুরে আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার একটি কুশপুত্তলিকাসহ এক উন্মুক্ত মিছিল বের কুশপুত্তলিকাটির বুকে তীর বসানো ছিল। সিলেটের কয়েকটি চা বাগানে হিন্দুস্তানী অস্ত্রশস্ত্র এনে রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।
পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।