পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

412 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড লন্ডনের টাইমস পত্রিকার ২৫শে মার্চ ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত পাল মার্টিন-এর পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন বিপ্লবীবাদী দল ছাত্রদেরকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ট্রেনিং দেয়া শুরু করেছে। পূর্ব পাকিস্তানের বহু গ্রামে একটি গণবাহিনীর সূচনা হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এই গণবাহিনীর ভবিষ্যৎ কাজ হবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করা। ইতিমধ্যেই গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন ল্যাবরেটরী থেকে চুরি করা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে তৈরী করা পেট্রোল বোমা ও অন্যান্য হাতে তৈরী বোমা পূর্বঞ্চলীয় রাজধানী ঢাকায় প্রথমবারের মতো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। জনতার চারটি দল সৈয়দপুর অভিমুখে যাত্রা করে এবং স্থানীয় এলাকা কোলাহাটের উপর আক্রমণ চালায়। এতে তিনজন লোক নিহত ও ১৭ (সতের) জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে দুজন বুলেট আঘাতপ্রাপ্ত এবং অন্য ৭ জন বন্দুকের গুলিতে আঘাত পায়। বাকী কয়জন আহত হয় লাঠিসোটার আঘাতে। ৫০টি বাড়ীও জুলিয়ে দেয়া হয়। সৈন্যবাহিনী গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। ফলে তিনজন লোক জখম হয়। পরে আরেক উন্মুক্ত জনতা সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের উপর আক্রমণ চালায়। তারা সৈন্যদেরকে লক্ষ্য করে বন্দুকের গুলি ছোড়ে। সৈন্যরা পাল্টা গুলি চালালে ৫ জন লোক আহত হয়। অপরদিকে আরেক জনতা সৈয়দপুর-দিনাজপুর সড়কে ডাক বিভাগের একটি গাড়ির উপর হামলা চালায়। তারা ড্রাইভার এবং কন্ডাক্টরকে গাড়ী থেকে টেনে নামায়। কন্ডাক্টরকে ঘটনাস্থলেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়, আর ড্রাইভারটি মারাত্মকভাবে আহত হয়। চট্টগ্রামে ক্যান্টনমেন্টের সামরিক বাহিনীর লোকদের যাতায়াত এবং অস্ত্রশস্ত্র আনা-নেয়া বন্ধ করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আগ্রাবাদগামী রাস্তায় অসংখ্য ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। প্রধান সড়কে কয়েকটি ট্রেঞ্চ খনন করা হয় এবং যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির জন্য রাস্তার উপর ট্রাক ও লরি, পিচের ড্রাম, ডাষ্টবিন ও ইটপাটকেল ফেলে রাখা হয়। আওয়ামী লীগের ব্যাপক সশস্ত্র প্রস্তুতি আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। শেখ মুজিবুর রহমান সাবেক কর্নেল ওসমানীকে বিপ্লবী বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করেন এবং তিনি সরাসরিভাবে শেখ মুজিবের কর্তৃত্বাধীনে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মজিদ এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জমকে নিয়োগ করেন। তালিকা সুষ্ঠুভাবে প্রণয়ন করা হয় এবং তা আওয়ামী লীগের সদর দফতরে রাখা হয়। অন্যদিকে তাদের হাতে অস্ত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আর এ জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা এবং যশোরের অস্ত্র দোকানগুলো লুট করা হয় এবং তা বিদ্রোহীদের ব্যবহারের জন্য সব বড় বড় শহরে মওজুত করা হয়। একমাত্র ঢাকা পুলিশ ষ্টেশনেই গুলিভর্তি ১৫ হাজার রাইফেল জমা করা হয়। বিভিন্ন ইপিআর এবং ইবিআর বহিঃফাঁড়ির মধ্যে অয়্যারলেস ট্রান্সমিটারের সাহায্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এক ইউনিট থেকে দ্রুত অন্য ইউনিটে নির্দেশ পাঠানো হয়। বৃহত্তম পরিচালন সদর দফতর ছিলো চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে। পরিচালনা কার্যক্রম অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে তৈরী করা হয় এবং এমন ব্যবস্থা রাখা হয় যে, ঢাকার আওয়ামী লীগ সদর দফতর থেকে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়ে যাবে। যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয় সেগুলো হচ্ছেঃ (ক) আকাশ কিংবা সমুদ্রপথে পাকিস্তানী সৈন্যের আগমন রোধ করার জন্য ইবিআর বাহিনী ঢাকা এবং চট্টগ্রাম দখল করবে।