পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

413 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড (খ) ইপিআর, পুলিশ এবং সশস্ত্র রাজাকারদের সাহায্যে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবশিষ্ট সৈন্যরা বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট এবং ফাঁড়িতে সশস্ত্র সৈন্যদের নির্মুল করবে। (গ) ইপিআর সীমান্তের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলো দখল করবে এবং তা বহিসাহায্যের জন্যে খোলা থাকবে। (ঘ) অবশিষ্ট অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হবে হিন্দুস্তান থেকে। (ঙ) আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলো দখল এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করার প্রথম পর্যায়ে সাফল্য লাভ করা মাত্রই হিন্দুস্তানী সৈন্যরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। শুক্রবার দিন খুব ভোরে এই বিদ্রোহ শুরু হবে বলে সময় ধার্য করা হয়। ২৫শে মার্চ দিনগত রাতে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বিদ্রোহ সংগঠন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের অভু্যত্থান বাস্তবায়িত করার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার আহবান জানান। সেনাবাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে এবং তারা হিন্দুস্তানের সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী এবং ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেট, ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস, ইষ্ট পাকিস্তান পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহী লোকদের মাধ্যমে আওয়ামী লীদের পূর্ব পাকিস্তান দখলের সশস্ত্র পরিকল্পনা বানচাল করে দেয়। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্রোহীদের দমন এবং হিন্দুস্তানী অনুপ্রবেশকারীদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য হিন্দুস্তান সংলগ্ন সীমান্ত বরাবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়। এই সময়ে যেসব এলাকা সাময়িকভাবে বিদ্রোহী এবং হিন্দুস্তানী অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণে আসে সেসব জায়গায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসের রাজত্ব যা পহেলা মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল তা অব্যাহতবাবে চলতে থাকে। এর ফলে এক লাখেরও বেশী পুরুষ, মহিলা ও শিশুর জীবননাশ হয়। তা ছাড়া বিপুলসংখ্যক সরকারী ও বেসরকারী ভবন, শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি বিনষ্ট এবং পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধিত হয়। আওয়ামী লীগের যুদ্ধবাজ কর্মী এবং ইপিআর ও ও ইবিআর-এর বিদ্রোহীরা নরঘাতকের ভূমিকা গ্রহণ পরিণত হয়। অবর্ণনীয় বর্বরোচিত কাজ সংঘটিত হয়। বগুড়া জেলার শান্তাহারের একটি এলাকায় ১৫ হাজারেরও বেশী লোককে ঘেরাও করা হয় এবং তাদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। মহিলাদেরকে উলঙ্গ করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরানো হয় এবং মাকে তার নিজ সন্তানের রক্ত পান করতে বাধ্য করা হয়। চট্টগ্রামে ১০ হাজারেরও বেশী লোককে হত্যা করা হয়। সিরাজগঞ্জে সাড়ে তিন শ মহিলা ও শিশুকে একটি হলঘরে তালাবদ্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ফলে তারা জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যায়। ময়মনসিংহে সানকিপাড়া এলাকায় ২ হাজার পরিবারের একটি কলোনীকে সম্পূর্ণ নির্মুল করা হয়। পুরুষদেরকে ঘর থেকে টেনে বের করে গুলি করে মারা হয় এবং মহিলাদের দিয়ে কবর খোঁড়ানো হয় ও তাদেরকে ধর্ষণ করা হয়। তারপর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে হত্যা করা হয়। ঐ ধরণের বর্বরোচিত ও অমানুষিক কয়েকটি ঘটনার কথা বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার কয়েকটির অংশবিশেষ নিচে উদ্ধৃত করা হলোঃ বর্তমান পূর্ব পাকিস্তানে বসবসরত লক্ষ লক্ষ অবাঙ্গালী মুসলমান প্রতি মুহুর্তে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তনের মধ্যেকার উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ার কথা অনুধাবন করছে এবং আশংকা করা যাচ্ছে যে, বাঙ্গালীরা এই বিরাট সংখ্যক সংখ্যালঘুদের উপর প্রতিশোধ নেবার উদ্দেশ্যে তাদের উপর চড়াও হয়েছে।’ ৪ঠা এপ্রিল, ১৯৭১ পিটার হাজেলহাষ্ট