পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

416 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড চতুর্থ অধ্যায় হিন্দুস্তানের ভূমিকা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রবিরোধী ব্যাক্তিদের সঙ্গে হিন্দুস্তানী যোগসাজশের প্রত্যক্ষ পরিচয পাওয়া গেলো ১৯৬৭-তে যখন আগরতলায় ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হলো। কয়েকজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন যে শেখ মুজিবুর রহমান এই ষড়যন্ত্রের সংগে জড়িত ছিলেন ১৯৬৪-র সেপ্টেম্বর থেকেই যখন দেশের অবশিষ্ট অংশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠিত হয়েছিলো। আগরতলা ষড়যন্ত্রের কর্মপরিকল্পনার প্রধান বিষয় ছিলো সামরিক ইউনিটগুলোর অস্ত্রাগারগুলো দখল করে সেগুলোকে আচল করে দেওয়া। পরিকল্পনা করা হয়েছিল যে এ কাজ করা হবে কমান্ডো কায়দায় এবং দলের লোকসংখ্যা কম বলে আক্রমণ করা হবে অতর্কিতভাবে। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে হিন্দুস্তানের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়। হিন্দুস্তানের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করার কথা ছিলো ১৯৬৭ সালের ১২ই জুলাই তারিখে হিন্দুস্তানের আগরতলায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭-র ডিসেম্বরে ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের একজন প্রকাশ করে যে, হিন্দস্তান পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র বিপ্লব গড়ে তোলার জন্য অস্ত্র ও অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তা ছাড়াও হিন্দুস্তান বলেছে যে হিন্দুস্তান সরকার চূড়ান্ত দিনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যোগাযোগকারী আকাশপথ ও সমুদ্রপথ বন্ধ করে ফেলবে। হিন্দুস্তান এই পরিকল্পনা কার্যকরী করলো ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। হিন্দুস্তান বিমান লাইনের একটি ফকার ফ্রেন্ডশিপ বিমানের গতি জোর করে পরিবর্তন করে তাকে লাহোরে নিয়ে যাওয়া হলো। গতি পরিবর্তনকারীরা পরে বিমানটি ধ্বংস করে ফেললো। এই ঘটনাকে ছুতো হিসেবে অবলম্বন করে হিন্দুস্তান সরকার তার এলাকার উপর দিয়ে পাকিস্তানী বেসামরিক বিমানের চলাচল বন্ধ করে দিল। এতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলো। সংশ্লিষ্ট বিমানের যাত্রীদের নিরাপত্তা ও হিন্দুস্তান তাদের আশু প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য পাকিস্তান সরকার সম্ভব সব ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিশন নিয়োগ করা হলো। তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে উদঘাটিত হলো যে, এ ঘটনাটি হিন্দুস্তানী এজেন্টরা ইচ্ছা করেই ঘটিয়েছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুস্তানী সীমানার উপর দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিমান চলাচল বন্ধ করার জন্য একটা ছুতো বের করা এবং পাস্তিানের দুই অংশের মধ্যে অসুবিধা ও উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলা। এ জন্য তারা এক সময়ের অপেক্ষায় ছিলো যা ছিলো পকিস্তানের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক আলোচনার সংকটকাল। গার্ডিয়ান পত্রিকার ১৭১ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারীর সংখ্যায় প্রকাশিত হলোঃ তিনি (মুজিব) প্রেসিডেন্ট না। তিনি এ কথা বলছেন, কারণ তিনি জানেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সৈন্য এতো কম যে, তারা বড় রকমের কিছু করার সাহস পাবে না। আর যেহেতু হিন্দুস্তানের ওপর দিয়ে বিমান চলাচল বন্ধ, কাজেই সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোও অসম্ভব। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হিন্দুস্তানের হস্তক্ষেপের কারণ বহু। আর এই সমস্যার মূল নিহিত রয়েছে অতীত ইতিহাসে। হিন্দুস্তান পাকিস্তানের সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে এই যে হিন্দুস্তান কখনো পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাকে সত্যি সত্যি মেনে নেয়নি। এমনকি বল্লভভাই প্যাটেলের হতো শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারাও আশা পোষণ করতেন যে, হিন্দু মাতৃভূমিরুপে ভারত পুনরায় যুক্ত হবে। এই আশা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে হিন্দুস্তান