পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

417 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রটি করেনি। সে হঠাৎ পাকিস্তানের জমিতে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিলো পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ব্যাহত করার জন্য লাখ লাখ মুসলমানকে ঘরছাড়া করে পাকিস্তানে ঠেলে দিলো । সে জুনাগড় দখল করে নিলো এই অজুহাত দেখিয়ে যে তার অধিবাসীরা হিন্দু আবার কাশীর দখল করার পেছনে সে অজুহাত দেখালো যে তার শাসনকর্তা হিন্দু। ১৯৬৫ সালে সে পশ্চিম পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমানায় সরাসরি আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানকে আঘাত হানলো। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সমাপ্তি ত্বরান্বিত করে সে পূর্ব পাকিস্তানের ২ কোটি ৩০ লাখ লোকের জীবনযাত্রা এবং সারা দেশের অর্থনীতিকে বিপদাপন্ন করে তুললো। এখন পূর্ব পাকিস্তানের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মধ্যমে সে আবার পাকিস্তানের সংহতিকে ক্ষুঃ করতে চায়। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে হিন্দুস্তানী সেনাবহিনীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে করা। নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর সৈন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষার্ধে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করা হলো পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে। এদের সাহায্যের জন্য নিয়োগ করা হলো মাউন্টেন ব্রিগেড, প্যারাসুট ব্রিগেড, জঙ্গী বোমারু বিমান এবং বিমান পরিবহন ইউনিট। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রবিরোধীদের সাহায্যের জন্যে হিন্দুস্তান সেনাবহিনীর বহু সৈন্যকে বিভিন্ন দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তের আরও কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হলো। জেট জঙ্গী বিমান এবং পরিবহন বিমানও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন বিমান ক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হলো । পশ্চিম বাংলায় পাঁচ ডিভিশনের ওপর সৈন্য সমাবেশ ছাড়াও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কয়েকটি অতিরিক্ত ব্যাটেলিয়ানও মোতায়েন করা হলো। এর আগেই কয়েকটি ব্যাটেলিয়ান পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছিল। এই ভাবে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে সমাবিষ্ট হলো প্রায় পচিশটি হিন্দুস্তানী ব্যাটেলিয়ান। এইসব ব্যাটেলিয়ান যাতে বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্যের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকতে পারে সে জন্য B.S.F এর (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) চিহ্ন সরিয়ে ফেলা হলো। জীপ এবং অন্যান্য যানবাহনের রং বদলে দেওয়া হলো। দিল্লী থেকে বিমানযোগে আরো B.S.F সৈন্য আনানো হলো সব B.S.F কোর্স বাতিল করে দেয়া হলো, পুলিশ বিভাগে ছুটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। হিন্দুস্তানী এলাকার ওপর দিয়ে পাকিস্তানী বিমান চলাচল বন্ধ করেও হিন্দুস্তান ক্ষান্ত হলো না। সে পূর্ব পাকিস্তানের সমুদ্র পথেও বাধা সৃষ্টি করতে চাইলো। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের দুই তারিখে হিন্দুস্তানী নৌঘাঁটি দেয়ারকার ৭০ মাইল পশ্চিমে যুদ্ধ জাহাজ The ocean Endurance নামক একটি পাকিস্তানী সওদাগরী জাহাজকে হয়রান করলো। হয়রানির থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জাহাজটিকে করাচী ফিরতে হলো। তিন দিন পর হিন্দুস্তানী যুদ্ধজাহাজ আর একটি পাকিস্তানী জাহাজে হয়রান করলো। এটি ছিল সফিনায়ে আরব জাহাজটি হাজীদের নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। হিন্দুস্তানের দক্ষিণ সীমান্তে কার্যরত আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকারী একটি নতুন ইউনিট অনুশীলন চালাতে গিয়ে উপকূল থেকে ১২৩ মাইল দূর পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে থাকে। এইভবে তারা পাকিস্তানী বেসামরিক বিমানকে আরও দক্ষিণ দিক দিয়ে যেতে বাধ্য করে। হিন্দুস্তানী বিমানাবাহিনীও এমন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে থাকে, যা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে তারা একটি সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ব সীমান্তে শিকারী জঙ্গীবিমান ও অতিরিক্ত পরিবহন বিমান মোতায়েন করা হলো পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিম ও উত্তর সীমান্তসংলগ্ন ঘাঁটিগুলোতে প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হলো। বঙ্গোপসাগরে পাকিস্তানী জাহাজগুলোর চলাচল পর্যবেক্ষণ করার জন্য কোলকাতার কাছে ব্যারাকপুরে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ বিমান মোতায়েন করা হলো। পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকা জুড়ে ব্যাপকভাবে ফটো গ্রহণের কাজ চালানো হয়। হিন্দুস্তানী সীমান্ত বাহিনীর লোকেরা স্থলপথে পূর্ব পাকিস্তানের ঢুকতে শুরু করলো এবং এই উদ্দেশ্য যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করা হলো। হিন্দুস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে গোপনে অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতে লাগলো। এমন বহুসংখ্যাক রাইফেল হস্তগত করা হয়, যাতে হিন্দুস্তানী রাইফেল ফ্যাক্টরি ইসাপুরের ছাপ রয়েছে। গোলাবারুদে পাওয়া গেছে হিন্দুস্তানের ফিরকী ফ্যাক্টরীর ছাপ।