পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

420 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সিস্টেমের প্রতিনিধি আর্নেস্ট ওয়েদাবল ১৯৭১ সালের ৩১ শে মার্চ তারিখে নয়াদিল্লী থেকে প্রেরিত এক রিপোর্টে জানালেনঃ “মুজিব ও তার বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ যে আগে থেকে সতর্কতার সঙ্গে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল তার সব রকম আভাসই পাওয়া যাচ্ছে । এই মুক্তিবাহিনীর প্রথম লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম বা পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র গভীর সামুদ্রিক বন্দর । এই বন্দরটি একবার ধ্বংস হয়ে গেলেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য সরবরাহের ব্যাপারে মুশকিলে পড়তেন । দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল ঢাকা অধিকার করা । যাতে তা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত না হতে পারে । মুজিব বহু দিন যাবৎ বাইরে থেকে সরবরাহ পেয়ে আসছিলেন বলে বিশ্বাস এবং ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তারিখ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত এসব লুকিয়ে রাখা হয়েছিল । নয়াদিল্লীতে অবস্থিত বহু বিদেশী কূটনীতিবিদ মনে করেন যে, এসব অস্ত্রশস্ত্র একমাত্র হিন্দুস্তান থেকেই আসা সম্ভব ছিলো। লন্ডন টাইমস-এর প্রতিনিধি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা থেকে প্রেরিত এক রিপোর্টে বলেছেন যে, বোমা ও বন্দুক সীমান্ত দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে সরবরাহ করা হচ্ছে এবং পূর্ব বাংলায় বেনাপোল সীমান্ত ফাঁড়ির কাছে পশ্চিম বাংলার গেরিলাদের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২৮শে এপ্রিল তারিখে নয়াদিল্লী থেকে প্রেরিত এএফপির খবরে বলা হয়েছে-‘পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ করার জন্য ১০ হাজার প্রাক্তন সৈনিককে সংঘবদ্ধ করা হচ্ছে।” লন্ডন টাইমস ১৯৭১ সালের জুন মাসের ২ তারিখের সংখ্যায় বলা হয়েছে। “হিন্দুস্তান সরকারই প্রায় সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মতবাদটিকে জিইয়ে রাখছে।” পত্রিকাটির কোলকাতা প্রতিনিধি বলেন যে, “সীমান্তের কাছাকাছি প্রায় ২০ টি শিবিরে হিন্দুস্তানী ইনসট্রাকটাররা প্রায় ৩০ হাজার রিক্রটকে ট্রেনিং দিচ্ছে। ” তিনি আরও বলেন যে, তথাকথিত ‘স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার হিন্দুস্তানী এলাকায় অবস্থিত । তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহের নীরবতার পর আজ আবার স্বাধীন বাংলা বেতার’-এর কণ্ঠ শোনা গেলো। বেতার থেকে ঘোষণা করা হলো যে কয়েকটি এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা হয়েছে । আজ সকালে আমি একটি বেতার দিকনির্দেশকযন্ত্রের সাহায্য ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কোন দিকে অবস্থিত তা পরীক্ষা করার চেষ্টা করলাম। আশ্চর্যের বিষয়, দিকনির্দেশকযন্ত্রে ধরা পড়লো যে, স্বাধীন বাংলা বেতারের শক্তিশালী ও স্পষ্ট ধ্বনি যেদিকে বাংলাদেশ অবস্থিত সেই পূর্ব দিক থেকে আসছে না বরং তা আসছে উত্তর দিক থেকে, যেদিক থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ধ্বনি আসে। শহরের অন্য কয়েকটি জায়গা থেকেও আমি অনুরূপ পরীক্ষা চালালাম । প্রতিবারই নির্ভুলভাবে ধরা পড়লো উত্তর দিক । উত্তরে চিনশুরা ও মাগুরার কাছে যেখানে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ট্রান্সমিটার অবস্থিত সেই দিক থেকেই আসছে স্বাধীন বাংলা বেতার এর ধ্বনি।” ১৯৭১ সালের ১৪ই এপ্রিল তারিখে লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় কোলকাতা প্রতিনিধি মার্টিন উলাকটের প্রেরিত একটি খবর প্রকাশিত হয় । অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের সদস্যরা বাংলাদেশের কোথাও রয়েছেন বলে হিন্দুস্তানী সংবাদপত্রগুলোতে যে খবর প্রকাশিত হয়, মার্টিন উলাকট তাকে কাল্পনিক বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তাদের সবাই কলকাতাতেই রয়েছেন আর তাদের রাখা হয়েছে রাষ্ট্ৰীয় অতিথি ভবনে। প্রতিনিধি আরও বলেন, যে গত শুক্রবার তথাকথিত স্বাধীনতা ঘোষণার যে অনুষ্ঠান হলো, তাতে চেয়ার ও অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে হিন্দুস্তানীরা এইসব ব্যক্তিদের সাহায্য করেছে । হিন্দুস্তানী সেনাবাহিনীর লোক সাদা পোশাকে সেখানে পাহারায় নিযুক্ত ছিলো। প্যারিসে লে মণ্ডি নামক ফরাসী দৈনিক পত্রিকার ২০শে এপ্রিলের সংখ্যায় বলা হয়েছে, “অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করা হয়েছে হিন্দুস্তান সীমান্ত থেকে এক মাইল দূরে একটি গাছের নিচে । আসলে যদিও এই সরকার গঠিত হয়েছিল কলকাতায় তবুও এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বিদেশী সাংবাদিকদের