পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৫৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

533 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। সবচেয়ে মৌলিক কথা হচ্ছে এই যে, আমাদের শত্ররা পাকিস্তানের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চায়নি। যা হোক আমরা কিছুতেই আমাদের মাতৃভূমিকে আন্তর্জাতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেব না। আবার যারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে আমাদেরকে ব্যবহার করতে চায়, তাদের কাছে আমাদের অস্তিত্বকে বিকিয়ে দিতে অথবা অর্থনীতিকে বন্ধক দিতে আমরা রাজী নই। শত্রর হাতে আমরা ক্রীড়নক হতে চাই না। তাই আমরা এমন কিছু করব না যা কিনা জাতীয় আত্মহত্যার সামিল হবে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যেসব যুবক সীমান্তের ওপারে চলে গিয়েছেন, তাদের এখন ফিরে আসা উচিৎ। এটা তাদেরই দেশ এবং একে পুনর্গঠন করার দায়িত্ব তাদেরই। আমি তাদের ফিরে আসার জন্য আহবান জানাচ্ছি। আমি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে তাই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলে তাদের কোন ক্ষতির আশংকা নাই। তাদের প্রত্যাবর্তনে বাধাদানের উদ্দেশ্যে যে সকল মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা গুজব রটনা করা হচ্ছে তাতে যেন তারা কর্ণপাত না করেন। এটা অত্যন্ত দুঃখের কথা যে, আমাদের বাস্তুত্যাগীদের প্রতি সহৃদয় ব্যবহার ও সমবেদনা প্রকাশ না করে, বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য লাভের উদ্দেশ্যে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে তাদের সংখ্যাও অনেক বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। সর্বোপরি যারা পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের রাজনৈতিক গুটি হিসেবে বাস্তুত্যাগীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পথে তাই নানাবিধ বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। আপনারা জানেন যে, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ছাড়াও প্রেসিডেন্ট সমস্ত প্রকৃত নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের আহবান জানিয়েছেন এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনান জন্য পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের প্রস্তাব প্রহণ করেছেন। এই প্রস্তাব অনুসারে সীমান্তের উভয় পারে এবং ভারতে অবস্থিত বাস্তুত্যাগী শিবিরগুলিতে গঠন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পিকিক ও আইডিবি ও পাকিস্তানে অবস্থিত অভ্যর্থনা শিবিরগুলিতে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মোতায়েনে করার কথা। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, ভারত এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারতের অসম্মতি জ্ঞাপন সত্ত্বেও প্রত্যাবর্তনকারীদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে আমরা সীমান্তের এপারে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক মোতায়েনে সম্মতি হয়েছি, আমি আপনাদের কাছে অঙ্গীকার করছি যে, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর পদের দায়িত্ব পালনকালে আমি জনগণের মনে আস্থা সৃষ্টির জন্য হবে এবং সীমান্ত পার হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে গমনের জন্য কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। যাদের বাসগৃহ, দোকানপাট ও জীবিকার উপায় বিনষ্ট হয়েছে তাদের পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সর্বপ্রকার আর্থিক ও প্রশাসনিক সাহায্য করা হবে। যাদের সম্পত্তি বেআইনীভাবে দখল হয়েছে কিংবা যাদের সম্পত্তি সাময়িকভাবে অন্যদের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে, সেগুলি প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এই কার্যে বাধাদানের কোন প্রকার চেষ্টা হলে তাকে কঠিন হস্তে দমন করা হবে। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টির সম্মুখেই আমাদের পুনর্বাসনসূচি রুপায়ণ করা হচ্ছে এবং এই কাজ যাতে দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় সেদিকে আমি কড়া নজর রাখবো। এই সুযোগে আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে এই আশ্বাস দিতে চাই যে, পাকিস্তানের অন্যান্য নাগরিকদের মত তারাও নাগরিকত্বের সমঅধিকারে অধিকারী। স্বদেশে পাকিস্তানের বিশ্বস্ত নাগরিক হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপনের জন্য প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তাদের বাড়ীঘর ও অন্যান্য সম্পত্তি তাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। ১৯৫০ সালের লিয়াকত-নেহেরু চুক্তি মোতাবেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিষয়ক মন্ত্ৰীপদ আমি গ্রহণ করেছিলাম। আমি তাদের সমস্যা সম্পর্কে অবগত আছি। কাজেই যাতে সংখ্যালঘু লিয়াকত-নেহেরু চুক্তি মোতাবেক ভারত সরকারে মন্ত্রী মিঃ সি সি বিশ্বাস ও পাকিস্তান সরকারের উজির হিসেবে আমি মিলিতভাবে কাজ করছি, যাতে উভয় দেশের উপদ্রুত অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। এখন পুনরায় অনুরুপ ব্যবস্থা গ্রহণ কেন সম্ভবপর হবে না তার কোন কারণ আমি দেখতে পাই না। এই বিরাট মানবিক সমস্যা