পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

534 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড সমাধানের জন্য আশু ব্যবস্থাদি আলোচনা করার উদ্দেশ্যে আমি এই বিষয়ক ভারতীয় মন্ত্রীর সঙ্গে যত শীঘ্র সম্ভব বৈঠকে মিলিত হতে রাজী আছি। প্রকৃত সদিচ্ছা ও মানবিক দুৰ্গতির প্রতি সত্যিকারের সহানুভূতি থাকলে এই সমস্যা সমাধানে আমাদের অপারগ হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। অতঃপর আমি আমাদের ছাত্র সম্প্রদায়কে এটা উপলব্ধি করতে বলবো যে, তারা হলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তারাই হলেন জাতির ভবিষ্যত স্থপতি। সুতরাং তারা যাতে ভবিষ্যতে নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন তার জন্য তাদের প্রস্তুত হতে হবে এবং তাদের শিক্ষা জীবন যাতে বাধাপ্রাপ্ত বা বানচাল না হয়, সেদিকে তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তাদের শিক্ষাজীবন পুনরায় শুরু করার জন্য যত শীঘ্র সম্ভব তাদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করা উচিত। কোন ভয়, ভীতি বা কোন ভ্রান্ত ধারণা তাদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত করুক তা কারুর কাম্য নয়। কারণ এ মনোভাব কোন জাতির পক্ষেই মঙ্গলজনক নয়। অপরপক্ষে এর ফলে সমাজ দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হয়। আমার যৌবনের প্রাক্কালে কিছু সময়ের জন্য আমিও বাংলার সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কিন্তু শীঘ্রই আমি উপলব্ধি করলাম যে সন্ত্রাসবাদের অর্থই হোল আমার দেশবাসীর জন্য ধ্বংস ও মৃত্যু এবং এই নীতি অনুসরণ করলে আমরা কোন লক্ষ্যেই উপনীত হতে পারব না। তাই আমি সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন থেকে নিজেকে মুক্ত করে স্বজাতির অধিকার অর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়মতান্ত্রিক ও অহিংসামূলক পথ বেছে নিলাম। এবং আমি নিজেও দেখেছি যে, নিয়মতান্ত্রিক ও অহিংসামূলক আন্দোলন খুবই ফলপ্ৰসূ। সেকালের অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী নেতৃবৃন্দও অনুরুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অসহযোগ আন্দোলন ফলপ্রসূ না হওয়ায় জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেও সি আর দাস ও মতিলাল, নেহেরুর মত বড় বড় নেতারা স্বরাজ পার্টি গঠন করেন এবং আইন পরিষদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। আমি সাধারণভাবে যুবকদের এবং বিশেষ করে ছাত্র সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যেন তারা পাকিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নতির ক্ষেত্রে তাদের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব স্মরণ রাখেন এবং নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হন। শ্রমিক ও মজুরদের এক আজীবন সেবক হিসেবে আমি শ্রমিক ও মালিক উভয় সম্প্রদায়ের নিকট অনুরোধ করবো যেন তারা দেশের অর্থনীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য একযোগে কাজ করেন। শ্রমিকদের এটা বুঝতে হবে যে, কলকারখানা বন্ধ হলে প্রকারান্তরে তাদেরই সমূহ ক্ষতি। এবং এর ফল জনসাধারণকেই ভুগতে হয়। মজুররা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে উৎপাদন কার্য সম্পাদন করতে পারেন এবং যাতে তাদের ওপর কোন প্রকার জুলুম বা হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন অথবা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, সেদিকেও আমি লক্ষ্য রাখবো। এ ব্যাপারে আমি আপনাদের আমার ব্যক্তিগত আশ্বাস দিচ্ছি। আপনাদের প্রতি আমার আবেদন এই যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা কাজে যোগদান করুন। মালিকদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই যে, সামাজিক ন্যায় বিচার ও সুখী শ্রমশক্তি ছাড়া কোন শিল্পেরই উন্নতি বা অর্থনীতির বিকাশ সাধিত হতে পারে না। বর্তমান প্রধান সমস্যা হোল প্রদেশের প্রতিটি লোকের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা। দুঃখের বিষয় হলো যে, উপর্যুপরি বেশকিছু বছর ধরে এই প্রদেশ খাদ্য ঘাটতি অঞ্চল হয়ে পড়েছে। এ বৎসর এই খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে, কারণ উৎপাদন হাসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই বর্তমান আর্থিক বছরে আমরা পশ্চিম পাকিস্তান ও বিদেশ থেকে ১৩ লক্ষ টন খাদ্যশস্য আমদানীর ব্যবস্থা করেছি। প্রদেশব্যাপী সরবরাহ কেন্দ্রসমূহ মারফত খাদ্যশস্য চলাচল ও বণ্টন ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এই উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রদেশের প্রত্যেক অঞ্চলের খাদ্যশস্য সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর সবিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। উপকূলীয় জাহাজ ও অভ্যন্তরীন নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করে নদী পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থা অনুসারে আমন ধান ওঠার আগ পর্যন্ত, আগামী ৪ মাসে, মাসপ্রতি দেড় লক্ষ থেকে দু লক্ষ টন খাদ্যসামগ্ৰী বন্দর থেকে বন্টন কেন্দ্রসমূহে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোটকথা নিয়মিত খাদ্যশস্য সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করার ফলে যে কোন বিশেষ সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।