পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৫৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

536 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কারখানাগুলিতে সতুর স্বাভাবিক কাজ আবার শুরু করার জন্য কারখানাগুলিকে সর্বপ্রকার সাহায্য দেওয়া হয়েছে। কাঁচামাল আমদানীর জন্য আমদানী নীতিতে সুবিধা দান, ব্যবসা ও বাণিজ্যের সম্প্রসারণের জন্য ষ্টেট ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কসমূহ কর্তৃক ঋণদানের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তভাবে সাহায্যের প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এক জোট হয়ে কনসোর্টিয়াম গঠন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পিকিক ও আইডিপিকে দেয় পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন কারখানাগুলির ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও নগদ পুঁজিদানেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গোলযোগকালে যে সকল হয়েছে। এর ফলে ব্যক্তিগত ব্যবসায়ে রত লোকদের পক্ষে তাদের ব্যবসাকে পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। প্রদেশের অর্থনীতির প্রধান অবলম্বন কৃষি ক্ষেত্রে ঋণদানের বিশেষ ব্যবস্থা করবার জন্য এডিবিপিকে বিশেষ খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বৎসরের পাটনীতিতে পাটের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণকালে মণ প্রতি ২ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে পাটচাষীদের আয়ের পথ সুগম হবে। পাটের এই বর্ধিত মূল্যকে টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে কাঁচা পাট রফতানীর ক্ষেত্রে বোনাসের সুযোগও শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জুট মার্কেটিং করপোরেশন এবং জুট ট্রেডিং করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন সরকার কর্তৃক নির্ধারত সর্বনিম্ন মূল্যে বহুল পরিমাণ পাট ক্রয় করে। এ কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে তার জন্য এই সংস্থাগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই দুই সংস্থার কাজে সাহায্য করার উদ্দেশ্য সরকার আরও একটি সংস্থার সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত করেছেন। তার নাম হবে জুট প্রাইস ষ্টেবিলাইজেশন করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে যে, প্রদেশের সমস্ত বিকল্প পাটের বাজার থেকে পাট ক্রয় করা। অবশ্য আমি এ কথা বলতে পারি না যে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ সন্তোষজনক। এখনও এমন অনেক অর্থনৈতিক ক্ষেত্র রয়ে গেছে য সরকারের পক্ষে উদ্বেগের কারণ। যা হোক এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমরা মোড় ফিরাতে সক্ষম হয়েছি এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি। আমি আমার দেশবাসীগণের নিকট আবেদন জানাচ্ছি যে, তারা যেন আমাদের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সরকারকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন। এই বিরাট কাজে যে শুধু প্রদেশের জনগণ ও প্রদেশের সরকারের কর্মতৎপর হতে হবে তাই নয়, বরং এতে সমগ্র জাতির সম্পদ ও সহয়তার প্রয়োজন হবে। আমি এ সম্বন্ধে একেবারে নিশ্চিত যে, সম্মিলিত শক্তিশালী ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে পাকিস্তান যাতে উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারে, তার জন্য এই মহান দেশের আপামর জনসাধারণ একই সঙ্গে হাত মিলিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। এবার আমি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে দু-একটি কথা বলব। আমাদের চারিদিকে এখন যা ঘটছে তাতে জনসাধারণের মনে দারুণ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আমি জানি যে, এই অস্বাভাবিক অবস্থার দরুন সমাজের প্রায় সকল স্তরের লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের এই দুঃখ-দুর্দশায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত। তাদেরকে আমি আমার আন্তরিক সহানুভূতি জানাচ্ছি। কাজেই সামাজিক পুনর্বাসন অপেক্ষা মানসিক পুনর্বাসন আজ অনেক বেশী জরুরী। কার্য-কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা দেখতে পাব যে, প্রত্যেকের মনেই ভয় ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে- এই অবস্থার অবসান এবং জনগণের মনে সম্পূর্ণ আস্থা ও শান্তি ফিরিয়ে আনা আমার সরকারের প্রধান দায়িতু এই গুরুদায়িত্ব পালনে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য। আমার বিশ্বাস যে, এই ব্যাপারে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাম্প্রতিক গোলযোগে শাসন ব্যবস্থারও প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। আমি আশা করি দেশ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার এই আশ্বাস দিতে চাই যে তারা যাতে সুচারুরূপে তাদের কর্তব্য সম্পাদন করতে পারেন সেজন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।