পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৫৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

547 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড অনুধাবনের উপদেশ দিয়েছেন । তিনি এখানে শহরের বিভিন্ন স্তরের লোকদের এক জনসমাবেশে বক্তৃতা করছিলেন । গভর্নর বলেন, নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ন্যায্য দাবী-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করা দোষের নয় কিন্তু তা কোন মতেই দেশের শান্তি, সংহতি ও অখণ্ডতার বিনিময়ে চলতে পারে না। তিনি দুঃখ করে বলেন, যখন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের প্রাপ্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার লাভের আকাংখা করছিল তখন চরমপন্থী লোকেরা এমনকি দেশকে বিচ্ছিন্ন করার দাবী তুলছিল। এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গভর্নর সীমান্ত অতিক্রম করে দেশত্যাগকারী পাকিস্তানীদের শত্রর হাতকে শক্তিশালী করে নিজেদের ভুলটাকেই চিরস্থায়ী না করার এবং হাজার হাজার লোকের দুঃখ কষ্ট আরো না বাড়ানোর আহবান জানান । পরিচালিত হওয়ার এবং তৎকালীন সমাজের শোষকদের শোষণ মুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠিত নিজেদের বাসভূমিতে ফিরে আসার আহবান জানান । তিনি কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধ্বংস সাধনের পথ বেছে নেওয়ার জোর নিন্দা করেন। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে শুধু জনসাধারণের দুঃখ-কষ্টই বাড়ানো যায়। শিক্ষা বর্জনের সর্বনাশা প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, এই আত্মঘাতী নীতি শুধু ব্যক্তি নয় গোটা জাতির পক্ষেই ক্ষতিকর । এর ফলে যে মূন্যতার সৃষ্টি হবে তা কখনোই পূর্ণ হবে না । মুসলমানরা এভাবে ইংরেজী শিক্ষা বর্জন করে পিছিয়ে পড়েছিল । লোকজনের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে জেলা কর্তৃপক্ষের উৎসাহব্যঞ্জক রিপোর্টের উল্লেখ করে গভর্নর সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি সহানুভূতি ও তাদের সদয় ব্যবহার করার জন্য আহবান জানান । গভর্নর প্রত্যাবর্তনকারীদের দ্রুত পুনর্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন । সিলেট জেলার এযাবৎ প্রায় ৪৭ হাজার পাকিস্তানী, অধিকাংশই অননুমোদিত পথে ফিরে এসেছেন বলে জেলা কর্তৃপক্ষ গবর্ণরকে জানিয়েছেন । এদের মধ্যে ৩০ হাজারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক । ট্রেনিংপ্রাপ্ত সশস্ত্র লোকজনসহ প্রকৃত পাকিস্তানীরা সীমান্ত অতিক্রম করে বহুস্থানে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে গভর্নরকে জানানো হয়। সরকারী কর্মকর্তা ও চা বাগান মালিকদের সাথে গভর্নরের আলোচনায় আরো জানা গেছে যে ১০০ চা বাগানে কাজ চলছে এবং ৮৪ টি চা বাগানে শত করা ৬০ ভাগ শ্রমিক কাজে যোগদান করেছে । চা বাগান মালিকদের একজন প্রতিনিধি গভর্নরকে বলেন, চা বাগানগুলোর উন্নতি ঘটছে। গভর্নর জেলার ফসলের অবস্থা স্বাস্থ্যরক্ষা পরিস্থিতি এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সভায় কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি রাজাকার বাহিনী পুনর্গঠনের এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত সরবরাহ অব্যহত রাখার সুপারিশ করেছেন । তারা বাইরের আক্রমণের মোকাবেলায় সর্বস্তরের লোকের পূর্ণ ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার আশ্বাস দিয়েছেন। গভর্নর পরে স্থানীয় রাজাকার ট্রেনিং কেন্দ্র পরিদর্শন করেন । সেখানে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি তাদের শত্রর মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার এবং সাহসিকতার সাথে তা প্রতিরোধ এবং জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করার আহবান জানিয়েছেন । সামরিক অফিসাররা গবর্ণরকে অভ্যর্থনা জানান । সেখান থেকে সোজা তিনি হযরত শাহ জালালের (রঃ) মাজারে যান এবং ফাতেহা করেন ।