পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৫৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

558 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড এর পূর্বে সমাবেশে ভাষণ দানকালে খুলনায় ডেপুটি কমিশনার এবং জেলা রাজাকার কমাণ্ডার খুলনায় রাজাকারদের কার্যকলাপের ভূয়সী প্রশংসা করেন । রাজস্ব মন্ত্রী আজম খান কমার্শিয়াল কলেজ মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্রসংঘ আয়োজিত এক সভায়ও ভাষণ দেন । পটভূমি ব্যাখ্যা করেন। সীমান্তের অপর পারে চলে যাওয়া ছাত্রদের দেশে ফিরে এসে জাতি গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহনেরও আহবান জানান । দৈনিক পাকিস্তান ১৮ অক্টোবর | অর্থমন্ত্রী আবুল কাসেমের বেতার ভাষণ উদ্বাস্তুদের প্রতি স্বদেশে ফিরে আসার আহবান ঢাকা কেন্দ্র থেকে এক ভাষণদান করেন। নিম্নে তার পূর্ণ বিবরন দেয়া হলোঃ “জাতীয় জীবনের চরম সন্ধিক্ষণে প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছে । এমন সংকটকালে মন্ত্রীসভায় যোগদান করে যে দায়িত্ব বরণ করে নিয়েছে তা অত্যন্ত গুরুতর ও দুৰ্বহ । দেশের বর্তমান পরিস্থির কথা বিবেচনা করেই এ গুরভার কাঁধে নিয়েছি । কারণ এটিকে জাতীয় ও মানবিক কর্তব্য বলেই মনে করেছি । বহিঃশত্রর চক্রান্তে যখন দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন, জনজীবন বিপর্যস্ত, প্রতিটি মানুষ দিশেহারা তখন শুধুমাত্র নীরব, নিক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালন করাকে জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করারই সামিল বলে গণ্য করেছি। তাই আমাদের ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে আমরা এগিয়ে এসেছি । আমাদের সাফল্য নির্ভর করছে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতার উপর । একটি বিদেশী শক্তির চক্রান্তের ফলে প্রদেশে হত্যা, লুণ্ঠন ও সম্পদ নাশের যে নারকীয় বিভীষিকার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে পাকিস্তানের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হওয়ার হওয়ার উপক্রম হয় এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোর অশুভ তৎপরতা তখন প্রদেশময় পরিব্যাপ্ত হয়ে পড়েছিল । সেগুলোকে দমন করার জন্য সৈন্যবাহিনীকে কর্তব্যভার গ্রহণ করতে হয়। রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলো তাদের কৃত পাপের দায়িত্ব নিরপরাধ মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে সরে পড়লো । মানুষ তখন একান্ত অসহায়, বিমূঢ়, হতবাক ও দিশেহারা । তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই । তাদের এমন অসহায় অবস্থায় আমরা চুপ করে থাকতে পারিনি । আমরা এগিয়ে এলাম । শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করলাম । শান্তি কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করা হলো । অচিরেই তা সারা প্রদেশে সম্প্রসারিত হয় ৷ আতংকগ্ৰস্ত ভেঙ্গে পড়া মানুষের মনে নিরাপত্তার ভাব ফিরে আসতে লাগলো। ছেড়ে যাওয়া বাড়িঘরে তারা ফিরে এলো। অনেকটা আস্থা ও স্বস্তির ভাব তারা ফিরে পেলো । খোদার দরবারে অশেষ শুকরিয়া, সমগ্র প্রদেশের মানুষ যখন হাহাকার করছে সেই মহাসংকটের দিনে আমরা এগিয়ে এসে অন্ততঃ কিছু জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে পেরেছি। মাসুম মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার যে সংকল্প গ্রহণ করেছি আল্লাহতায়ালা তা রক্ষার জন্য যেন তওফিক দান করেন । প্রিয় ভাই-বোনেরা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ঘৃণ্য কারসাজিতে দেশের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন । পাকিস্তানের ভিত্তিমূলে সে মারণ আঘাত হানতে উদ্যত। সর্বশক্তিতে এবং সর্বস্ব পণ করে প্রতিহত করতে হবে। পাকিস্তান আমাদের সে বাঁচালে আমরা বাঁচবো জাতি হিসাবে অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবো ।