পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

573 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ১২০। রাজাকারদের প্রতি জেনারেল নিয়াজীর আহবান দৈনিক পাকিস্তান ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ রাজাকারদের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবায় আহবান পূর্বাঞ্চলীয় কমাণ্ডের অধিনায়ক ও ‘খ’ অঞ্চলে সামরিক আইন প্রশাসক লেঃ জেনারেল এ, এ, কে নিয়াজী গতকাল মঙ্গলবার রাজাকারদের প্রতি শৃংঙ্খলা ও জাতির প্রতি নিঃস্বার্থ সেবার গুণাবলী অর্জনের আহবান জানান। এপিপির খবরে প্রকাশ, জেনারেল নিয়াজী পাবনায় রাজাকারদের এক সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন । এতে শান্তি কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন । এর আগে জেনারেল নিয়াজী স্থানীয় ট্রেনিং স্কুলে ট্রেনিং গ্রহণরত রাজাকারদের পরিদর্শন করেন । জিওসি তার সাথে ছিলেন । জেনারেল রাজাকারদের বলেন যে, তাদেরক দেশ রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব মহান সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন যে, এই মহান দায়িত্ব পালনের জন্য গভীর শৃংঙ্খলাবোধ ও আর্দশের প্রতি নিঃস্বাৰ্থ নিষ্ঠার প্রয়োজন। জেঃ নিয়াজী বলেন যে, পাকিস্তান রক্ষা করা প্রকৃতভাবে তাদের নিজেদের বাড়ীঘর রক্ষার সামীল তিনি বলেন যে, মানুষের জন্য মৃত্যু অনিবার্য । তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু হচ্ছে গৌরবমণ্ডিত। তিনি বলেন, এর দ্বারা তার সমস্ত পাপ মুছে যায় এবং সে আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হয় । এর আগে পাবনায় পৌঁছালে এক বিরাট উৎফুল্ল জনতা জেঃ নিয়াজীকে সংবর্ধনা জানায় । পরে তিনি রাজশাহী যান। সেখানে তিনি ছাত্র ও বিশিষ্ট নাগরিকদের এক বিরাট সমাবেশে ভাষণ দেন । তিনি শান্তি কমিটির সদস্যদের সাথে দেখা করেন । রাজশাহী সমাবেশে ভাষণদানকালে জেনারেল নিয়াজী বলেন যে, অভ্যন্তরীন গোলযোগ বা দেশদ্রোহীদের চক্রান্তের দ্বারা দুর্বল হয়ে পড়া ছাড়া মুসলমানেরা ইতিহাসে আর কখনো পরাজয় বরণ করেনি। তিনি ভাষাগত ও সংকীর্ণ সংস্কারের উস্কানি দিয়ে জনসাধারণের মধ্য বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান । প্রেসিডেন্ট যে সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন সে সম্পর্কে জেঃ নিয়াজী বলেন যে, যারা ফিরে এসেছে তাদের সবাই ক্ষমা ও পুনর্বাসন করা হয়েছে। তিনি দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি শত্রর ঘৃণ্য উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে জাতিগঠনের কাজে আত্মনিয়োগের উদ্দেশ্যে দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে বোঝানোর আহবান জানান । তিনি বলেন যে, যেকোন ঘরোয়া বিরোধ থাকলে তাতে প্রতিবেশীদের অযথা হস্তক্ষেপের সুযোগ না দিয়ে ঘরের মধ্যেই তা সমাধান করা উচিত । পুল উড়িয়ে দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনে বা শিল্প উৎপাদনে বাধা দিয়ে যারা সাধারণ মানুষের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধার সৃষ্টি করতে চাচ্ছে তাদের সনাক্ত ও নির্মুল করার জন্য তিনি জনসাধারণের আহবান জানান। জেঃ নিয়াজী ভাষণের পূর্ব স্থানীয় জনগণ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা বক্তৃতা ও কবিতা পাঠ করেন। তারা মাতৃভূমির প্রতিরক্ষার জন্য তাদের শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জনেরও শপথ গ্রহণ করে। সবার শেষে জেঃ নিয়াজী গাড়ীতে রাজশাহী বাজারের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সেনাবাহিনীর সদর দফতরে যান । সেখানে তাকে রাজশাহী জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে সম্প্রতি উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমান অস্ত্র, গোলাবারুদ, ও বিস্ফোরক দ্রব্য দেখানো হয় । স্থানীয় কমাণ্ডার জেঃ নিয়াজীকে জানান যে, বর্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে দুস্কৃতিকারীদের তৎপরতা ক্রমশঃ কমে আসছে। জেঃ নিয়াজী সৈন্যদের পরিদর্শন করেন এবং তাদের সাথে ঘরোয়াভাবে আলাপ করে । তিনি দেশ রক্ষার জন্য তাদের পুরোপুরি প্রস্তুত ও তাদের উচ্চ মনোবল লক্ষ্য করেন।