পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

27 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড মিঃ প্রধান মন্ত্রী, আমি নিশ্চিত, আপনি আমার সঙ্গে একমত হবেন যে আমি অন্য কোন পথ নিতে পারতাম না। ২৬শে মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বেতার ভাষণে উক্ত লক্ষ্য পূরণের জন্য আমার সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থার কারণ আমি বিশদভাবে বলেছি। পাছে এই বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ আপনি না পান তাই আমার রাষ্ট্রদূতকে আমার বিবৃতির একটি কপি আপনার হাতে দেবার জন্য আমি নির্দেশ দিচ্ছি। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি ভালভাবেই নিয়ন্ত্রণ আছে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ধীরে ধীরে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কোন কোন বাইরের সূত্র, বিশেষ করে ভারতীয় তথ্য মাধ্যম প্রচারিত বিবরণে সঠিক পরিস্থিতি প্রতিফলিত হয় না এবং বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করাই এর উদ্দেশ্য। আমি আপনার সঙ্গে একমত যে, এশিয়ায় কতিপয় শক্তি ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলীকে নিজেদের পক্ষে অনুকূল মনে করে আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও অখণ্ডতার প্রতিকূলে বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। সুতরাং সর্বতোভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যাতে কোন হস্তক্ষেপ না ঘটে তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় হুমকী এই প্রসঙ্গে আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারছি না যে, আমরা যখন আমাদের অখণ্ডতা রক্ষার দাঁড়িয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, ও অন্যান্য বিশিষ্ট নেতৃবর্গ পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী সম্পর্কে প্রকাশ্য বিবৃতি দিচ্ছেন যা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল। এইরুপে ভারত এক বিপজ্জনক নজীর স্থাপন করছে যা আন্তর্জাতিক সমাজের সরাসরি উদ্বেগের বিষয়। আরো গুরুতর ব্যাপার হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তের অনতিদূরে প্রায় ছয় ডিভিশন ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন। এই বাহিনীর মধ্যে গোলন্দাজ রেজিমেন্ট ও ছত্ৰী ব্রিগেড রয়েছে। পশ্চিম বাংলার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বা তিন সপ্তাহ পূর্বে সমাপ্ত নির্বাচনের প্রয়োজনের সঙ্গে এর সঙ্গতি নেই। আমাদের সীমান্ত বরাবর ভারতের সৈন্য সমাবেশ আমাদের নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি স্বরুপ। এমত পরিস্থিতিতে আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা ভারতের ওপর আপনাদের অনস্বীকার্য প্রভাব খাটাবেন এবং তাকে (ভারতকে) পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে ও পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে তেমন কাজ থেকে বিরত থাকার প্রয়োজনটা বুঝিয়ে দেবেন। পাকিস্তানের ঘটনাবলীতে আপনার উদ্বেগকে অনুধাবণ করে পরিশেষে একটা কথা বলবো যে, আমার লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রথম সুযোগেই আমি পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তিবাদী ব্যক্তিদের সাথে আলাপ শুরু করার ইচ্ছা পোষণ করি। মিঃ প্রেসিডেন্ট, আমি আরো বলব যে, যে কোন সরকারই সেইদেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার ওপর আক্রমণকারী ধ্বংসাত্মক ব্যক্তিদের ক্ষমা করতে পারে না কিংবা পাশ কাটাতে পারে না। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দেশকে খণ্ডিত করার কোন ম্যাণ্ডেট পাকিস্তানের জনগণের কাছ থেকে পাননি। তথাপি তারা সক্রিয় শত্রতায় লিপ্ত এক প্রতিবেশীর বৈষয়িক সমর্থনপুষ্ট রাষ্ট্র বিরোধী ব্যক্তিদের পাকিস্তানের ঐক্য বিনাশকারী কাজকে উৎসাহ দিয়েছেন।