পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (সপ্তম খণ্ড).pdf/৬৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

605 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : সপ্তম খণ্ড ইসালামাবাদে ও পূর্ব পকিস্তান কমিটি ঢাকা পৃথকভবে বৈঠকে মিলিত হবে। এছাড়া অন্তবর্তীকালীন সময়ে রাষ্ট্ৰীয় ব্যবস্থাপনা ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্র মোতাবেক হলেও সমস্ত ক্ষমতা পূর্ব পাকিস্তানে ৬ দফার ভিত্তিতে হস্তান্তর করা হবে। জনাব ভুট্টো আরও বলেন যে, ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্র প্রদেশকে কোন স্বায়ওশাসন প্রদান করেনি। এতে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাব রয়েছে। তিনি আরও বলেন যে পিপলস পার্টি এ অবস্থায় এই মনে করে যে, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে, সেখানে স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, নির্বাচন করা হবে অতঃপর কেন্দ্রীয় বিষয়াদির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেষে প্রয়োজন হলে দুইটি পৃথক কমিটি গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদের সুপরিশের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট য়োষণা করুন তিনি এটাই দাবী করেছিলেন। তিনি বলেন যে, একবার যদি প্রদেশগুলোকে ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে পাচটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবে। জনাব ভুট্টো বলেন যে, মার্চ মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর উপদেষ্টাদের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় তাতে তারা একটি নতুন ফরমুলা পেশ করেন। এতে তাঁরা তাঁদের পূর্বতন দাবী থেকে সরে গিয়ে বলেন যে, দুটি শাসনতান্ত্রিক কনভেনশন গঠন করতে হবে এবং জাতীয় পরিষদে শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাব পেশ অনুমোদন নেবার প্রয়োজন হবে না। এই দুটি শাসনতান্ত্রিক কনভেনশন দুটি পৃথক শাসতন্ত্র প্রণয়ন করবে এবং পরে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে মিলিত হয়ে ফেডারেশন নয়, কনফেডারেশনের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবে। আওয়ামী লীগের এই ডিগবাজীতে আমরা বিস্মিত হইনি। আমরা জানতাম মুজিবর রহমান কি চান। আমরা জানতাম তাঁর আসল উদ্দেশ্য কি? তাঁর উত্থাপিত প্রস্তাব চালাকি ছাড়া আর কিছু নয়’। জনাব ভুট্টো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে শেখ মুজিবের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তিনি জনসাধারণকে ভুল পথে চালিত করছিলেন এবং প্রকৃতই তিনি পাকিস্তানের সংহতিতে বিশ্বাস করেন না। ২৩ শে মার্চ চূড়ান্ত খেলা দেখানো হয়। বাংলাদেশের নতুন পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং জাতীয় পতাকা ছিড়ে ফেলা হয়। তাছাড়া জাতির পিতার প্রতিকৃতি পদদলিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল থেকেই শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে দেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে পৃথক করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। জনাব ভুট্টো বলেন, বার কোটি লোকের দেশকে বক্তৃতা, শ্লোগান এবং অন্যভাবে উৎসাহিত করে বিভক্ত ও ধ্বংস করা যাবে না। তিনি বলেন, যেখানে নাইজেরিয়ার মত দেশ একটি অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন হতে দিল না সেখানে পাকিস্তানও দেশকে খণ্ডবিখণ্ড হতে দিতে পারে না তিনি জানান, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তা পাকিস্তানের নিজস্ব ও অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ‘ভারত বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর কোনই অধিকার ভারতের নেই। এরুপ কোন অনুরোধ জাতিসংঘ রক্ষা করতে গেলে তা উস্কানীর কাজ হবে বলে ভুট্টো হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। দৈনিক পূর্বদেশ, ৩০ মার্চ, ১৯৭১